চাকরির পেছনে না ছুটে দৃঢ় মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে গত তিন বছরে কৃষিকাজে নিজের জীবন বদলে ফেলেছেন তৈয়বুর রহমান লাজু। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখন এলাকার অনেকেই কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন...
শাকসবজি ও সাথী ফসল চাষের সাফল্যে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তৈয়বুর রহমান লাজু। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের দৃঢ় মনোবল আর ইচ্ছা শক্তি দিয়ে গত তিন বছরে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করে বদলে ফেলেছেন নিজের জীবন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তৈয়বুর রহমান লাজুর বাবা আকবর আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। বাবার অবসরের পর সংসারের হাল ধরেন লাজু। ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন পৈতৃক জমিতে চাষাবাদ। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক লাজু এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখার পর কৃষিকাজে মন দেন। কিন্তু পরে আবারও পড়ালেখা শুরু করেন। চলতি বছর পরীক্ষা দেবেন স্নাতকে। বর্তমানে কৃষি থেকে বছরে তাঁর আয় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। কৃষিকাজে লাজুকে সহায়তা করেন স্ত্রী তৌহিদা বেগম ও ছেলে তৌফিক এলাহী। কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরও এক একর জমিতে কচুরলতি চাষের পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তৈয়বুর রহমান লাজু জানান, কৃষি নিয়ে তিনি গত তিন বছর ধরে নিয়মিত পড়াশোনা করছেন। ইউটিউব থেকে কচুরলতি চাষ সম্পর্কে জানতে পেরে নিজে ৩০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করেন। এতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার লতি বিক্রি করেছেন এবং বাকি ফসল থেকে আরও দুই-আড়াই লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। ফসল শেষে গাছ ও চারা বিক্রির আশা করছেন তিনি। কচুরলতির পাশাপাশি লাজু যৌথ বাগান গড়েছেন। ৭৭ শতাংশ জমিতে ২৩০টি গৌরমতী আম গাছ ও ৬০০টি পেয়ারা গাছের সমন্বয়ে একটি বাগান করেছেন। আরেকটি ৭৫ শতাংশ জমিতে ৩৬০টি বারি-৪ জাতের আম গাছের মাঝে ১ হাজার ২০০ বস্তায় আদা চাষ করছেন। এই মৌসুমে এখান থেকে দেড় লাখ টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ শতাংশ জমিতে শরিফা ও পেঁপে চাষ করেছেন, যেখানে ৪৬টি শরিফা ও ১৬১টি পেঁপে গাছ রয়েছে। এ ছাড়া ২০০টি বরই গাছ, কলা বাগান, গরুর খামার এবং সেখান থেকে উৎপাদিত গোবর দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির হাউসও তৈরি করেছেন। বাগান নজরদারিতে রাখতে বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা। তাঁর সাফল্য দেখে এলাকার নারীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সাবেক ইউপি সদস্য নুরবানু তাঁর প্রেরণায় ২০ শতাংশ জমিতে মালটা, আম, আদা ও পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। কৃষক আবুল কালামসহ আরও অনেকে এখন লাজুর পরামর্শে কৃষিতে মনোনিবেশ করছেন।
এ ছাড়া তরুণ কৃষকদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করেছেন, যেখানে কৃষি বিষয়ক নানা তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। পাশাপাশি তিনি একজন ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবেও সফলতা পেয়েছেন। সেখান থেকেও আয় করছেন। ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘তৈয়বুর রহমান লাজু একজন অনুকরণীয় কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন। যৌথ বাগান ও সাথী ফসল চাষে আমরা তাঁকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। এটি একটি লাভজনক এবং টেকসই পদ্ধতি।’