২০১৭ সালে তিনি যুক্ত হন ফেসবুকভিত্তিক রক্তদাতা সংগঠন ‘রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে। এ পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার রোগীর জন্য রক্তের সংস্থান করেছেন আসিফ। শুধু তা-ই নয়, তিনি নিজের উদ্যোগে প্রায় ১৫ হাজার রক্তদাতার তথ্য ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করে রেখেছেন গুগল ডেটাবেজে...
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জীবনকে থামিয়ে রাখতে পারে না। জীবন এগিয়ে চলে নিজের গতিতে। সেই গতিকে বেগবান করতে প্রয়োজন হয় মনের জোর আর অদম্য সাহসের। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও যারা মানুষের পাশে দাঁড়ান, সাহস নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তারাই অনুপ্রেরণীয়। এমনই একজন আসিফ আহমেদ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি। রক্তদানের মতো মহৎ কাজে যুক্ত করেছেন নিজেকে। নিজে যেমন নিয়মিত রক্ত দেন, তেমনি অন্যের প্রয়োজনে শত শত ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দেন। তিনি পরিচিত একজন রক্ত সৈনিক। আসিফ ময়মনসিংহ শহরের সন্তান। তিন ভাইবোনের পরিবারে তিনি মেজো। মা আকলিমা বেগম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। আসিফ ব্রহ্মপুত্র পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। একটু খর্বাকৃতির, সমাজে ‘প্রতিবন্ধী’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তাতে কী। যার মনেপ্রাণে মানুষের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছা তাকে দমিয়ে রাখে কে? ২০১৭ সালে তিনি রক্তদান নিয়ে কাজ শুরু করেন। ফেসবুকে রক্তদাতাদের পোস্ট তাকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করে। সে সময় থেকে তিনি যুক্ত হন ফেসবুকভিত্তিক রক্তদাতা সংগঠন ‘রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে। ধীরে ধীরে সংগঠনের একজন নির্ভরযোগ্য অংশ হয়ে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তিনি এ সংগঠনের একজন মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা এখন ৩ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি। অসংখ্য মানুষের রক্তের প্রয়োজনে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেন। এ পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার রোগীর জন্য রক্তের সংস্থান করেছেন আসিফ। শুধু তা-ই নয়, তিনি নিজের উদ্যোগে প্রায় ১৫ হাজার রক্তদাতার তথ্য ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করে রেখেছেন গুগল ডেটাবেজে। জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক সময় পুরো ব্যাগ রক্ত দিতে পারেননি তিনি। তারপরও অল্প অল্প করে মোট এ পর্যন্ত সাতবার রক্ত দিয়েছেন। যা বাচ্চাদের প্রয়োজনে কাজে লেগেছে। তার রক্ত মুমূর্ষু রোগীর প্রয়োজনে কাজে লেগেছে। রক্তদান ভালো কাজ হলেও শুরুর দিকে মানুষের সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আসিফ বলেন, ‘মানুষের কথায় আমি আমার তৎপরতা বন্ধ করিনি। আমি আমার মতো করে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করি। আমার যদি শারীরিক যোগ্যতা থাকত তাহলে আমি ফুলব্যাগ রক্ত দিতাম। কিন্তু আমি তা পারি না। যতটুকু পারি, তাতেই আমার খুব ভালো লাগে। রক্তদানের বিষয়ে আমাদের সমাজে এখনো নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা আমাকে ব্যথিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করেন রক্ত দিলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, নানা রোগ হয় বা স্থায়ী ক্ষতি হয়- এসব সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।’ আসলে রক্তদান একটি নিরাপদ ও উপকারী প্রক্রিয়া। আসিফের মতে, ‘রক্তদানের পর শরীর নিজে থেকেই নতুন রক্ত তৈরি করে নেয়, এতে শরীর রিফ্রেশ ও সক্রিয় হয়। রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই, বরং উপকারই বেশি।’ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সঠিক সুযোগ পেলে তারা সমাজের শক্তি হয়ে উঠতে পারেন, আসিফ আহমেদ তারই প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আর মন থেকে কাজ করলে একজন প্রতিবন্ধী মানুষও সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে, আমি নিজেই তার প্রমাণ।’