দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে। বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম স্থিতিশীল থাকে না। কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সৌরবিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব এবং উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় কম। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকার সৌরবিদ্যুৎকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যে ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে এ সরকার। দরপত্রে অংশ নেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় সৌরবিদ্যুতের কিলোওয়াটপ্রতি উৎপাদন খরচ কমে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের অধীনে এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) ইস্যু করা ৩১টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চেয়ে এ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ গড়ে ২১ শতাংশ কম। এর কিলোওয়াটপ্রতি গড় ব্যয় ১০ দশমিক ৪৭ সেন্ট (মার্কিন মুদ্রা) থেকে কমে ৮ দশমিক ২৭ সেন্ট হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, ৫৫টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে চারটি টেন্ডার প্যাকেজ আহ্বান করা হয়।
দরপ্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গে সৌরবিদ্যুতের জন্য কিলোওয়াটপ্রতি দর প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮৯, চট্টগ্রামের জন্য ৭ দশমিক ৯৫, ময়মনসিংহের জন্য ৮ দশমিক ৮৮ এবং সিলেটের জন্য ৯ দশমিক ০৬ সেন্ট। বিগত সরকার আমলে বিশেষ আইনে উত্তরবঙ্গের জন্য দর প্রস্তাব করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৪২, চট্টগ্রামের জন্য ১২ দশমিক ১০, ময়মনসিংহের জন্য ৯ দশমিক ৯৩ এবং সিলেটের জন্য ৯ দশমিক ৮৮ সেন্ট। বর্তমানে বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, এর মধ্যে কয়লা ছাড়া অন্যান্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের চেয়ে কম ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোয়। বর্তমানে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে কিলোওয়াটপ্রতি গড় ব্যয় ৫ দশমিক ৪৭ সেন্ট। বিগত সরকার আমলে নেওয়া সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কিলোওয়াটপ্রতি গড় ব্যয় ১৩ দশমিক ২৯, এলএনজিতে গড় ব্যয় ৮ দশমিক ৪৩ থেকে ৯ দশমিক ৩৬ এবং ডিজেলে ব্যয় ১৪ থেকে ১৫ দশমিক ০৩ সেন্ট। বিপরীতে দরপত্রে আহ্বান করা সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কিলোওয়াটপ্রতি গড় ব্যয় ৮ দশমিক ২৭ সেন্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চাই বিদ্যুতের মূল্য ৮ টাকা ৯৫ পয়সার মধ্যে রাখতে। সাশ্রয়ী মূল্যে সৌরবিদ্যুৎ গ্রাহককে দেওয়া হলে গ্যাসের উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ ব্যবহারও তুলনামূলক কমবে।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহ-উপাচার্য, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘কম দামে সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া গেলে ভালো। যুক্তিসংগত দামে পাওয়া গেলে তা যে উৎস থেকেই আসুক গ্রাহক এবং শিল্পমালিকরা সেটিই চাইবেন।’ বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সৌরবিদ্যুতের দাম কমে আসার কারণ হচ্ছে, এখন দেশি কোম্পানির সক্ষমতা বেড়েছে। সৌরপণ্যের দাম কমেছে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের কারণে দামে প্রভাব পড়েছে।’