চেনাজানা সবার কাছে তুহিন বা মাহমুদ হলেও মার্কিন নথিপত্রে আমি মিস্টার বাংলাদেশ। কালো পাসপোর্টেও আমি এঁকে দিয়েছি সবুজ বাংলাদেশের ছবি। হাজার মাইল দূরে থেকেও আমি আমার মাঝেই খুঁজে পাই বাংলাদেশকে...
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রামিক সিটির মেয়র পদে লড়ছেন চারজন। এর মধ্যে একটি নাম চমকে দেওয়ার মতো। তার নাম মিস্টার বাংলাদেশ। হ্যামট্রামিকের অনেকেই ভোটের প্রচারে এ নাম দেখে চমকে গেছেন। আইনিভাবেই বাংলাদেশের নাম বুকে ধারণ করে ভোটের মাঠে নেমেছেন তিনি। আরও তিনজনের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন তিনি। ৫ আগস্ট প্রাইমারিতে এ তিনজনের সঙ্গে লড়াই হবে তার। প্রার্থীদের মধ্যে আরও দুজন বাংলাদেশি থাকলেও মিস্টার বাংলাদেশই ব্যালটে তুলে এনেছেন বাংলাদেশের নাম। মিস্টার বাংলাদেশ নামে হ্যামট্রামিক সিটির মেয়র পদে লড়ছেন দেওয়ান মাহমুদ চৌধুরী। পাশাপাশি তিনি তুহিন চৌধুরী নামেও পরিচিত। সিলেট শহর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন তিনি। তুহিন চৌধুরী দেশে থাকতে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও এ পেশার মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। কাজের ফাঁকে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তুহিন চৌধুরী কৈশোর থেকেই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। শৈশবেই যুক্ত হয়েছিলেন বই আন্দোলনের সঙ্গে। গড়ে তোলেন পাঠাগারও। সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তুহিন মাহমুদ কাজ করেছেন দৈনিক মানবজমিন, সিলেটের স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেট ও উত্তরপূর্বে। ক্রীড়া সাপ্তাহিক ক্রীড়াজগতেও লিখেছেন নিয়মিত। সিলেটে থাকাকালীন যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সঙ্গে। আমেরিকায় পাড়ি জমানোর পরও সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন তিনি। কাজ করেছেন প্রথম আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা অফিসে।
যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত সিটি হ্যামট্রামিকে বাংলাদেশিদের শক্ত অবস্থান। ইয়েমেনি, পোলিশ এবং অন্যান্য অভিবাসী জনগোষ্ঠীও রয়েছে ছোট এই শহরে। ২৭ হাজার বাসিন্দার এ শহরের একটি অংশ বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী হলেও সিটির শীর্ষ পদে কখনই নিজেদের কাউকে পায়নি বাংলাদেশি কমিউনিটি। সে হতাশাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন তুহিন চৌধুরী। নিজস্ব কমিউনিটিসহ সিটির সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। দেওয়ান মাহমুদ চৌধুরী বা তুহিন চৌধুরী নয় কেন, কেন মিস্টার বাংলাদেশ নামে ভোটের মাঠে নামলেন। এমন প্রশ্নে তুহিন চৌধুরীর ভাষ্য, বাংলাদেশকে আমি সব সময়ই বুকের মাঝে গভীরভাবে অনুভব করি। যখন দেশ ছেড়ে ঠিকানা গড়ি এই আমেরিকায়। মন পড়ে থাকে বাংলাদেশেই। যখন মার্কিন পাসপোর্ট গ্রহণ করার সময় আসে তখন বুকের ভিতর যেন কেমন করে ওঠে। এবার কি বাংলাদেশি পরিচয়টা আমি হারিয়ে ফেলব? আমার দেশের পতাকার রংমাখা সবুজ পাসপোর্টটা-আমার আর থাকবে না, কালো রঙের নতুন পাসপোর্টে থাকবে না আমার দেশের চিহ্ন। ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। মায়ের সঙ্গে, মাতৃভূমির সঙ্গে সম্পর্ক কি চাইলেই ছিঁড়ে ফেলা যায়। পাসপোর্টের আবেদনে তাই নিজের নামেই তুলে নিই আমার প্রিয় বাংলাদেশকে। চেনাজানা সবার কাছে তুহিন বা মাহমুদ হলেও মার্কিন নথিপত্রে আমি মিস্টার বাংলাদেশ। কালো পাসপোর্টেও আমি নাম দিয়ে এঁকে দিয়েছি সবুজ বাংলাদেশের ছবি। হাজার মাইল দূরে থেকেও আমি আমার মাঝেই খুঁজে পাই বাংলাদেশকে।
দেশের প্রতি গভীর টান থাকলেও তুহিন চৌধুরী জানালেন, কাগজপত্রের হিসেবে তিনি এখন আমেরিকান। দেশের প্রতি ভালোবাসাটাকে নিজের মাঝেই আটকে রেখেছেন। সিটির উন্নয়নে কোনো ভেদাভেদ চান না তিনি। এখানে সবারই পরিচয় আমেরিকান। বাংলাদেশি, ইয়েমেনি পরিচয়ে বন্দি না থেকে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চান তিনি।