কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর - লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার ( ১ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কালোয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির দুই কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহতরা হলেন কয়ার কালোয়া গ্রামের জয়নাব শেখের ছেলে জিয়ার শেখ (৫০) এবং মৃত আছাই শেখের ছেলে বিপুল শেখ (৩০)। তাদের মুখে ও মাথায় একাধিক সেলাই দিয়েছেন চিকিৎসক। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালোয়া বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জমারত সরদার ওরফে এগলা গ্রুপের সঙ্গে ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম মেম্বর গ্রুপের বিরোধ চলছিল। শনিবার সকালে বিএনপি নেতা রাশিদুল গ্রুপের লোকজন কালোয়া বাজারে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বিএনপির দুই কর্মী আহত হন। এরপর উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।
দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আহত জিয়ার ও বিপুল। তাদের মুখে ও মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা।
এ সময় বিপুল শেখ বলেন, মাসখানেক হলো আওয়ামী লীগ নেতা জমারত আমাদের কালোয়া বাজারে যেতে দিচ্ছেনা। শুক্রবার কালোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আমাদের ছেলেপেলে খেলা করছিল। সেসময় জমারত হুমকি ধামকি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
শনিবার সকালে আমরা বাজারের পরিস্থিতি দেখতে গেলে জমারতের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন ইটপাটকেল মারা শুরু করে। এতে আমরা দুইজন আহত হয়েছি।
আহত জিয়ার বলেন, আমরা বিএনপি করি বলে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা ও ভাঙচুর করেছে। থানায় মামলা করব।
বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে কালোয়া গ্রামজুড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেশকিছু ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে ভাঙচুরের ক্ষত।
এ সময় অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা জমারত সরদার বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও বর্তমানে বিএনপি নেতা বকুল মেম্বরের সঙ্গে আছি। সকালে আরেক বিএনপি নেতা রাশিদুল মেম্বর গুলি করতে করতে তার লোকজন নিয়ে এলাকায় ঢুকে বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করেছে। থানায় মামলা করা হবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা জমারত সরদার বিএনপির একাংশের সঙ্গে মিশে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। কয়েক মাস ধরে মাঝেমধ্যে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। থানায় এরআগেও মামলা করা হয়েছে। আবারো মামলা করব।
থানার উপপরিদর্শক প্রকাশ চন্দ্র বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে দু'পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে। কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে দুইটা গরু উদ্ধার করে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকেই দু'পক্ষের বিরোধ চলে আসছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল