দুই ভাই সুরমা আবাসিক এলাকার একটি কুঁড়েঘরে থাকেন। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে যৌথ পরিবারে বসবাস করছেন তারা। দরিদ্র পরিবারে ভ্রাতৃত্বের এ যেন এক অনন্য নজির। তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি তাদের কর্মপন্থা। নিয়মিত লাইব্রেরি ভবনের নিচে বসলেও ক্যাম্পাস বন্ধের দিন ছুটে যান আবাসিক হলগুলোতে। এ যেন কেবল ব্যবসা নয়, এক ধরনের দায়বদ্ধতা...
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণ। এ প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসের এক কোণে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন আপন দুই ভাই প্রদীপ ও সঞ্জীব। তারা তিন দশক ধরে ক্যাম্পাসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছেন। জুতা মেরামতের এ পেশাকেই তারা বেছে নিয়েছেন জীবনের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে। তাদের কাছে প্রতিদিন আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। ছেঁড়া স্যান্ডেল, ছুটে যাওয়া জুতার সোল, ভাঙা বেল্ট, সবকিছুর সমাধান আছে তাদের হাতে। তারা কাজ করেন দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে। তাদের জীবনে কোনো চাকচিক্য নেই, নেই আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। কিন্তু আছে দৃঢ়তা, কাজের প্রতি সম্মান এবং আত্মবিশ্বাস। শুধু টিকে থাকার প্রয়োজনে নয়, পেশার প্রতি সম্মান থেকেই এ কাজ তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। যান্ত্রিক জীবনের স্রোতে এ দুই ভাইয়ের শ্রম আর নিষ্ঠা মানবিক অনুপ্রেরণার নাম। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই লাইব্রেরি ভবনের পাশে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন প্রদীপ ও সঞ্জীবের পিতা দিলীপ বাবু। বয়সের ভারে কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে ২০২০ সালে পরপারে যাত্রা করেন তিনি। জীবনের দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সখ্য ছিল তার। বাবার কাজে সহযোগিতার মাধ্যমেই জুতা সেলাইয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন প্রদীপ ও সঞ্জীব। তাদের পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জে হলেও কাজের সুবাদে এখন দুই ভাই সুরমা আবাসিক এলাকার একটি কুঁড়েঘরে থাকেন। দীর্ঘদিন একসঙ্গে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে যৌথ পরিবারে বসবাস করছেন তারা। দরিদ্র পরিবারে ভ্রাতৃত্বের এ যেন এক অনন্য নজির। তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি তাদের কর্মপন্থা। নিয়মিত লাইব্রেরি ভবনের নিচে বসলেও ক্যাম্পাস বন্ধের দিন ছুটে যান আবাসিক হলগুলোতে। এ যেন কেবল ব্যবসা নয়, এক ধরনের দায়বদ্ধতা। জুতা সেলাই করে স্বল্প আয় হলেও অন্য পেশায় যেতে অনিচ্ছুক দুই ভাই। এমনকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধন ছিন্ন করা সম্ভব নয় বলে জানান প্রদীপ। এ বিষয়ে প্রদীপ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আমার বাবা দিলীপ বাবু এ ক্যাম্পাসে কাজ করেছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যরকম একটা বন্ধন ছিল তার। গত তিন দশক ধরে আমরা দুই ভাই কাজ করছি সেই ভালোলাগা থেকেই। আয় যা হয় তা দিয়ে কোনোরকম চলতে পারি। জীবনের বাকি সময়টুকু এ ক্যাম্পাসেই কাটাতে চাই।