জাতিসংঘে বিশ্ব নেতারা বহু পরিকল্পনা আর স্বীকৃতির খতিয়ান খুলে বসলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকায়। উল্টো পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দখলদার ইসরাইল কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। তারা কেবল হামলা করেই ক্ষান্ত নয়। গাজায় জীবন রক্ষাকারী জিনিসপত্রও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ফলে অনাহার আর মহামারির দ্বারপ্রান্তের দাঁড়িয়ে আছে গাজা।
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত উত্তর গাজায় খাদ্যের অভাব এবং চরম মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ইসরায়েল তাদের স্থল আক্রমণ জোরদার করার আগে এই মাসের শুরুতে উত্তর গাজায় জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর বন্ধ করে দেয়। ফলে এমন জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জিকিম ক্রসিং বন্ধের পর থেকে কমিউনিটি কিচেন ও স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং জরুরি খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলো।
গত ১২ সেপ্টেম্বর জিকিম ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জন্য এটি ছিল গাজায় তাদের মোট খাদ্য সরবরাহের প্রায় অর্ধেক প্রবেশের একমাত্র পথ। এই ক্রসিং বন্ধ হওয়ার পর থেকে ডব্লিউএফপি উত্তর গাজায় আর কোনো খাদ্য সরবরাহ করতে পারেনি বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে। ইউনিসেফ মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেছেন, জিকিম বন্ধ হওয়ায় যারা পেছনের দিকে রয়ে গেছে, তাদের জন্য দুর্ভিক্ষ আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে।
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ আল-শাওয়ার মতে, জিকিম বন্ধ হওয়ার আগে যেখানে উত্তর গাজায় দৈনিক প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার জনের জন্য খাবার তৈরি হতো। এখন তা কমে ৫০ হাজারে নেমে এসেছে। খাদ্য বিতরণকারী কয়েকটি রান্নাঘর এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজা সিটির সাবরা এলাকার বাসিন্দা উম জাকি পাঁচ সন্তানের জননী। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হচ্ছে। খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং দুষ্প্রাপ্যতাও বাড়ছে। তিনি বলেন, খাবার বিক্রি করত এমন লোকেরা দক্ষিণে চলে গেছে।
এদিকে, গাজা সিটির বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা ইসমাইল জায়েদা জানান, তিনি শুধু টিনজাত খাবার দিয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এখানে একদমই কোনো সবজি নেই। গাজা সিটি পৌরসভা জানিয়েছে, তারা এখন তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। দৈনিক চাহিদার ২৫ শতাংশের কম পানি সরবরাহ হচ্ছে।
গাজায় অপুষ্টিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিষেবাও সঙ্কুচিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে গাজা সিটিতে চারটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে কিছু অপুষ্টি চিকিৎসা কেন্দ্রও বন্ধ হয়েছে। দক্ষিণে হাসপাতালগুলোতেও নতুন করে রোগী নেওয়ার আর জায়গা নেই।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল