প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে গোটা বিশ্ব। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৬২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। এতে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬০৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ১৭১ জনের।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেরও বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের কেরালা রাজ্য সরকার ১৫টি উদ্যোগ নিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।
কেরালা সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগগুলো হল:-
১. যোগাযোগ ট্রেসিং ইউনিট
কোনও ব্যক্তি বিদেশ থেকে এলাকায় আসলেই তার সম্পর্কে তথ্য রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠায় একদল স্বেচ্ছাসেবী। তারা ওই ব্যক্তি চলাফেরার ওপরও নজর রাখে।
২. আক্রান্ত ব্যক্তির চলাচলের ম্যাপ তৈরি
কোনও ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হলে তার চলাফেরার পুরো ম্যাপ তৈরি করছে কেরালার স্বাস্থ্য বিভাগ। অর্থাৎ ওই ব্যক্তি সম্প্রতি কোথায় কোথায় গিয়েছে এবং কাদের সঙ্গে মিশেছে সব কিছুর একটি মানচিত্র তৈরি করে ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার।
৩. কোয়ারেন্টাইন স্বস্তি
করোনাভাইরাস শনাক্তে যেখানে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ এমনকি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিয়েছে, সেখানে কেরালা রাজ্য সরকার কোয়ারেন্টাইন করছে ২৮ দিনের জন্য, যাতে করে সংক্রমণ ছড়ানোর আর কোনও সম্ভাবনা না থাকে।
শুধু তা-ই নয়, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের তাদের পছন্দ মতো খাবার সরবরাহ, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ওয়াইফাই’র ব্যবস্থা ও রোগ থেকে সেরে উঠতে কাউন্সেলিং করছে কেরালা।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা
যারা বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করে চিকিৎসা করছে কেরালা সরকার। এ জন্য চালু করা হয়েছে বেশ কয়েকটি হটলাইন নাম্বার, যাতে ফোন দিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য জানতে পাচ্ছেন তারা। যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত তাদেরকে চিকিৎসকরা চিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সেলিং করছেন।
৫. আক্রান্তদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা সরাসরি সাক্ষাত
আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি মুহূর্তে খোঁজ খবর নিচ্ছে ওই রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসার পাশাপাশি মনোবল বাড়াতে কাউন্সেলিং করছেন।
৬. নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন প্রেস ব্রিফিং করছে রাজ্যের স্বাস্থ্যবিভাগ।
৭. ইন্টারনেট সেবা বৃদ্ধি
এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ইন্টারনেট সেবা বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। যাতে প্রতি মুহূর্তে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য জানতে পারে রাজ্যের মানুষ।
৮. পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার উৎপাদন
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার উৎপাদনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে। ৫০০ মিলি স্যানিটাইজারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৫ রুপি।
৯. ভুয়া তথ্য শনাক্তে অ্যাপ চালু
করোনা সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য শনাক্তে অ্যাপ চালু করেছে কেরালার রাজ্য সরকার। এই অ্যাপের মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত সব ধরনের ভুয়া ও অসত্য তথ্য যাচাই করতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
১০. দুপুরের খাবার সরবরাহ
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কেরালা রাজ্য সরকার এই মাসের শেষ দিন পর্যন্ত রাজ্যের সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (শিশু কেয়ার) ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এরপর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের বাড়ি বাড়ি দুপুরের খাবার পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করছে কেরালা সরকার, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।
১১. রেল ও সড়কের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট
রাজ্যজুড়ে প্রত্যেকটি রেল ও সড়কের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব চেকপোস্টে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তে মেডিকেল চেকআপ করা হচ্ছে।
১২. অভিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি
রাজ্যের সব অভিবাসীদের মধ্যে করোনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে নিবির্ঘ্ন যোগাযোগ স্থাপনে তাদের ভাষাভাষি কর্মীর ব্যবস্থা করেছে কেরালা সরকার।
১৩. ‘ব্রেক দ্য চেইন’ কর্মসূচি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে ‘ব্রেক দ্য চেইন’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কেরালা রাজ্য সরকার। এই কর্মসূচির আওতায় হাত ধোয়া ও হাত পরিষ্কার করতে সাবান এবং স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে হাত ধোয়ার মাধ্যমে কীভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো প্রতিরোধ করা যায়, সে ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
১৪. পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা
রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২২ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীর ব্যবস্থা করেছে কেরালা সরকার।
১৫. প্রবাসী নাগরিকদের সাদরে গ্রহণ
করোনা আক্রান্ত যেসব দেশে কেরালার নাগরিক রয়েছে তারা দেশে ফিরতে চাইলে তাদের সাদরে গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এক্ষেত্রে তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘করোনা নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট ব্যবস্থারও বিরোধিতা করেছে। স্থানীয় সরকারের ঘোষণা, কেরালার কোনও নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও ফিরে আসতে চাইলে তাদেরকে সসম্মানে গ্রহণ করা হবে এবং যথোপযুক্তভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট
বিডি প্রতিদিন/কালাম