করোনাভাইরাস যেন কাউকেই করুণা না করার পণ করেছে! ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসের ছোবলে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে এখন জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বাংলাদেশে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সভা, সমাবেশ, জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে সিলেটে সামাজিক অনুষ্ঠান বিয়ের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতা হিসেবে সিলেটজুড়ে একের পর এক বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন দিনে সিলেট বিভাগে অন্তত ৫টি বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে প্রশাসন। এছাড়া কয়েকটি বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর জরিমানা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা বিদেশ থেকে ফিরবেন, তাদের অবশ্যই ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যেহেতু সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেহেতু বিয়ে বা এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানও এখন আয়োজন করা যাবে না।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে গত ১১ মার্চ ফ্রান্স দেশে ফিরেন এক যুবক। গত ১৬ মার্চ তিনি বিয়ে করেন। বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার ওই প্রবাসী যুবককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া বর ও কনের পরিবারের ৮ জনকে পাঠানো হয় হোম কোয়ারেন্টিনে।
একই জেলার মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামের এক যুবক ফ্রান্স থেকে ফিরেছেন সম্প্রতি। তার বিয়ে ছিল গত বৃহস্পতিবার। বিয়েতে যোগ দিতে তার ছোট ভাই ১৪ মার্চ ফিরেন ফ্রান্স থেকে। খবর পেয়ে সে বিয়ে বন্ধ করে প্রশাসন। এছাড়া বরের ওই ছোট ভাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের এক তরুণ গত ৮ মার্চ গ্রিস থেকে দেশে ফিরেন। গত বৃহস্পতিবার ছিল তার বিয়ে, শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে। খবর পেয়ে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। বন্ধ করা হয় বিয়ে, বরকে পাঠানো হয় হোম কোয়ারেন্টিনে। আর কনে পক্ষ এবং সেন্টার কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই জেলার কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন গ্রামের এক যুবক আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন কয়েক দিন আগে। গত বৃহস্পতিবার তার বিয়ের তারিখ ধার্য্য ছিল, স্থানীয় বরমচালের একটি সেন্টারে। সে বিয়েও বন্ধ করে বরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রশাসন।
এছাড়া কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চকেরগ্রামের এক যুবক ওমান থেকে দেশে এসেছেন গত ১৫ মার্চ। উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার।
এর আগে বৃহস্পতিবার ছিল আকদ অনুষ্ঠান। উপজেলা প্রশাসন খবর পেয়ে বরের বাড়িতে হাজির হয়। তবে আকদ আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। পরে বরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রূপশপুর গ্রামের এক ছেলের বিয়ে ছিল শুক্রবার (২০ মার্চ)। খবর পেয়ে প্রশাসন সে বিয়ে বন্ধ করে দেয়। এছাড়া যে সেন্টারে বিয়ের আয়োজন ছিল, সে সেন্টার কর্তৃপক্ষকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে, শুক্রবার (২০ মার্চ) সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শিলেরভাঙা গ্রামে একটি বিয়ের আয়োজন করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধ করে বরপক্ষকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
সিলেটের কানাইঘাটের দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের বাউরভাগ পশ্চিম গ্রামের এক যুবক গত ১১ মার্চ মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বিয়ের আয়োজন করেন। শুক্রবার ছিল তার বিয়ে। কানাইঘাট পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামে কনের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বর আর সেখানে যেতে পারেননি, প্রশাসন বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে বর ও কনের আকদ সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসন বরকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, সিলেট মহানগরীতেও আপাতত কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতা হিসেবে জনসমাগম করা যাবে না। এজন্য বিয়ের অনুষ্ঠানসহ যেখানে জনসমাগম হতে পারে, সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত