গতকাল ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অটিজম সচেতনতা কনসার্ট যাতে অংশগ্রহণ করে দেশের প্রখ্যাত ১২ ব্যান্ড। ব্যান্ডগুলো তাদের পরিবেশনায় মাতিয়ে তোলে দর্শকদের।
কনসার্টটি যৌথভাবে আয়োজন করে পিএফডিএ-ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার (পিএফডিএ-ভিটিসি), বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বামবা), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্ক্যাইট্র্যাকার লিমিটেড। কনসার্টটিতে অংশগ্রহণ করে মাইলস্, ওয়ারফেজ, সোলস্, দলছুট, ফীডব্যাক, শিরোনামহীন, মাকসুদ ও ঢাকা, পাওয়ারসার্জ, নেমেসিস, ভাইকিংস, আর্বোভাইরাস ও দৃক।
একইদিনে কনসার্ট এবং এশিয়া কাপে বাংলাদেশ বনাম ভারতের ফাইনাল খেলা থাকায় কনসার্ট চলাকালীন সময়ে বিশাল পর্দায় খেলাটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য দেখানো হয়। এই দারুণ আয়োজনে ব্যান্ডপ্রেমী এবং ক্রিকেটপাগল সকলেই একসাথে কনসার্ট এবং খেলার মজা নিতে পারেন।
কনসার্টটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল “ডিফারেন্টলি এবল, নট ডিজেবল”। অংশগ্রহণকারী ব্যান্ড এবং অতিথি সকলেই এই সমর্থন জানান এবং একাত্মতা ঘোষণা করেন।
গরম তীব্রতা থাকা সত্ত্বেও প্রচুর দর্শকের সমাগম ঘটে কনসার্টে। কনসার্ট শুরু হয় বামবা’র জন্যে উল্লাসধ্বনির মাধ্যমে। প্রথমে মঞ্চে ওঠে হার্ডরক ব্যান্ড দৃক। বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যান্ড কুইন এর “উই উইল রক ইউ” গানটির মাধ্যমে কনসার্ট শুরু হয়। এরপর তারা পরিবেশন করে তাদের নিজস্ব ‘নতুন আলো’, ‘তারুণ্যের মিছিল’ এবং ‘প্রতিকার অবসান’। ‘ঝর্ণার মতো চঞ্চল’ গানটি গেয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেয় দৃক।
এরপর মঞ্চে ওঠে বাংলাদেশের প্রথমদিকের ব্যান্ড ফীডব্যাক। ‘মৌসুমী’ গানের মাধ্যমে দর্শকরা চলে যান হারানো অতীতের দিনগুলোতে। এরপর তাদের ‘উদাসী’ এর পর ‘কেন খুলেছ তোমার জানালা’ গানের সাথে গলা মেলায় একজন বিশেষ অটিস্টিক শিল্পী। সমস্ত বাধা ভুলে বিশেষ শিল্পী যখন দর্শকদের দিকে তার হাত নেড়ে ওঠেন, দর্শকরাও তাকে বিপুল করতালি এবং উল্লাস প্রকাশের মাধ্যমে সমর্থন যোগান। এরপরে ফীডব্যাক পরিবেশন করে ‘টেলিফোনে ফিসফিস’, ‘জন্মেছি এই যুগে’ এবং ‘মেলা’।
গিটারিস্ট আসতে না পারা সত্ত্বেও পাওয়ারসার্জ দর্শকদের জন্য শক্তিশালী পরিবেশনা নিয়ে আসে। পাওয়ারসার্জ পরিবেশন করে ‘অপ্রস্তুত যুদ্ধ’, ‘শেষ সীমানা’ এবং ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ গানগুলো।
শারীরিক অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন অটিজমের ব্যাপারে তার সমর্থন জানাতে মঞ্চে আসেন। তার উপস্থিতিতে স্টেডিয়াম ‘বেসবাবা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
এরপর বাপ্পা মজুমদার এবং তার ব্যান্ড দলছুট পরিবেশন করে ‘জোছনা বিহার’, ‘দিন বাড়ি যায়’ এবং ‘চাঁদের শহরে’। বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচে টাইগারদের উজ্জীবিত করতে দলছুট পরিবেশন করে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের শহর’। দলছুটের অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় গান ‘তুমি আমার বায়ান্নো তাস’ গানে তাদের সাথে গলা মেলায় সুপ্ত এবং সাফওয়ান, দুজন বিশেষ শিশু।
ভাইকিংস তাদের পরিবেশনা শুরু করে ‘ভালোবাসি যারে’ গানের মাধ্যমে, যা উৎসর্গ করা হয় অটিস্টিক ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে। এরপর একে একে ভাইকিংস পরিবেশন করে ‘এলোমেলো’, ‘কথা দাও’ এবং তাদের জনপ্রিয় গান ‘অপেক্ষা’।
সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তার উপস্থিতির মাধ্যমে কনসার্টটিকে অলংকৃত করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “অটিজম লজ্জার কোন বিষয় নয়। এটি প্রকৃতির বিচিত্র খেলা। সমাজের সকলকে অটিজম সচেতনতার ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে”।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারলেও ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি অন অটিজম এন্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজর্ডারস এর চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন একটি লিখিত বক্তব্য প্রেরণ করেন। তার লিখিত বক্তব্যে এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং অটিজমের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকারী সকল পরিবারকে অভিনন্দন জানান। তিনি আরো জানান, সক্ষমতা এবং অক্ষমতা নির্বিশেষে এই দেশ সকলের।
এরপর পালা আসে দেশের অন্যতম সেরা ব্যান্ডগুলো মঞ্চে ওঠার। তখনো মঞ্চে ওঠা বাকি মাইলস্, ওয়ারফেজ, মাকসুদ ও ঢাকা এবং সোলস্ এর। মাইলস মঞ্চে এসে পরিবেশন করে ‘ধিকি ধিকি’, ‘জ্বালা জ্বালা’ এবং ‘ফিরিয়ে দাও’ এর মতো বিখ্যাত গানগুলো। মাইলসের পর মঞ্চে ওঠে ওয়ারফেজ এবং তাদের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করে। দর্শদের উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। এরপর পরিবেশনার পালা আসে মাকসুদ ও ঢাকা’র। কনসার্টটি শেষ হয় আর্বোভাইরাস এবং সোলস্ এর গানের মাধ্যমে। জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর সাথে অংশগ্রহণ করতে পেরে দারুণ একটি সময় উপভোগ করেন কনসার্টে অংশগ্রহণকারীরা।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন