করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সারা বিশ্বে ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন যন্ত্রের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার দেশেই ভেন্টিলেটর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
ভেন্টিলেটর তৈরির এই প্রক্রিয়ায় মিনিস্টারকে সহযোগিতা করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বুয়েটের কয়েকজন বায়োম্যাডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সার্বিক দায়িত্বে কাজ করে যাচ্ছে মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের এক ঝাক অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং ডিজাইন, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) টিম।
সম্প্রতি এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত মেডিক্যাল যন্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিকের সহায়তায় মিনিস্টারসহ কয়েকটি দেশীয় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভেন্টিলেটর তৈরিতে এগিয়ে এসেছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশে ভেন্টিলেটর উৎপাদন হবে। এ ব্যাপারে আমরা ভীষণভাবে আশাবাদী।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড ভেন্টিলেটরের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পর তারা এটির পূর্ণ উৎপাদন শুরু করবে। এফবিসিসিআই প্রথম প্রোডাকশন লট থেকে ১০% ক্রয় করে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবাদানকারী হসপিটাল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং পরবর্তী লট থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য হাসপাতালে সরবরাহ করবে। এটি এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আরেকটি প্রয়াস। এই কার্যক্রমে জড়িত মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড, এর চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এম এ রাজ্জাক খান (রাজ), উনার টিম, বুয়েটের বায়োম্যাডিক্যাল এক্সপার্টস, এফবিসিসিআইয়ের টিম মেম্বার্স সবার প্রতি এফবিসিসিআই গভীর শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছে।
চলমান কার্যক্রম নিয়ে মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এম এ রাজ্জাক খান (রাজ) বলেন, ‘মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড দেশের মানুষের জন্য একটি ভেন্টিলেটর নিয়ে কাজ করছে যা করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম, আইসিটি মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই ও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, বুয়েটের কয়েকজন বায়োম্যাডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সহযোগিতার ফলে আমরা সাফল্য অর্জনের কাছাকাছি রয়েছি। আগামী সপ্তাহে আমরা ১০০ ইউনিট ভেন্টিলেটর উৎপাদন করবো। এরপর ৫০০, ১০০০ এবং পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী এটি আমরা উৎপাদন করবো। এই ভেন্টিলেটনের মূল্য ৭৫-৮৫ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। এখানে আমাদের ব্যবসায়ীক কোনো উদ্দেশ্য নেই বরং আমরা এই ভেন্টিলেটরের সরবরাহের মাধ্যমে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে এগুলো তুলে দিতে চাই, কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার করার জন্য।
মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের নিজস্ব কারখানায় অক্সিজেন ভেন্টিলেশন যন্ত্র তৈরির জন্য কাজ করছে। এছাড়াও মাস্ক তৈরির জন্য ইতোমধ্যেই মেশিন আনা হয়েছে, অতি দ্রত মাস্ক উৎপাদনও শুরু হচ্ছে। এ মাসের মধ্যেই এসকল জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি শুরু করবে মিনিস্টার।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন