রাজধানীর কল্যাণপুর বস্তিতে (পোড়া বস্তি) ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর সহায়তায় নির্মিত ওয়াশ সেন্টার এবং ব্র্যাকের বিভিন্ন কোভিড-১৯ বিষয়ক প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।
শনিবার সকালে সরেজমিন এই পরিদর্শনের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
কল্যাণপুর বস্তিতে বর্তমানে প্রায় ৮,০০০ মানুষ বসবাস করেন, যারা সকলেই অতি দারিদ্র্যের মাঝে জীবন জাপন করেন এবং প্রতি পরিবারের গড় আয় মাত্র ৩,৭২৫ টাকা। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং ব্যবহারযোগ্য নিরাপদ পানির চরম সঙ্কট রয়েছে।
এ অবস্থার উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে গত মার্চে করোনা মহামারী সংক্রমণের কিছুদিন আগেই ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এবং পাবলিক স্যানিটেশন সেবার নকশায়ন ও বাস্তবায়নে দক্ষ নবীন সামাজিক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ভূমিজ, গত ১৪ মার্চ যৌথভাবে রাজধানীর কল্যাণপুর বস্তিতে একটি কমিউনিটি টয়লেট (শৌচাগার) নির্মাণ করে।
এই টয়লেটে মোট ৬টি টয়লেট রয়েছে, যেখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা আলাদা করে ৩টি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে উন্নত মানের হাত ধোয়ার জায়গা, বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা (পিওরইট) এবং এবং ওয়াশিং মেশিনের মাধ্যমে কাপড় পরিষ্কারের সুব্যবস্থা রয়েছে। এর কল্যাণপুর বস্তির অধিবাসীদের সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো-ই এই ওয়াশ সেন্টারটির লক্ষ্য। পাশাপাশি এই যৌথ অংশীদারিত্ব, নবীন সংগঠন ভূমিজ-কে তাদের উদ্ভাবিত টেকসই ওয়াশ বিজনেস মডেলের উন্নয়ন ও বিকাশে সহায়তা করছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডিকসন, ইউবিএল চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক সরেজমিনে ওয়াশ সেন্টারটি ঘুরে দেখেন এবং বস্তির অধিবাসীদের মুখ থেকে ওয়াশ সেন্টার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা শোনেন। ভূমিজ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা রশিদ পরিদর্শকদের সামনে ওয়াশ সেন্টারের বিজনেস মডেলটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন।
পরিদর্শনের দ্বিতীয় অংশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার জনাব ডিকসনকে ব্র্যাক বাংলাদেশ এর ”হাইজিন অ্যান্ড বিহেভিয়ার চেঞ্জ কোয়ালিশন” (এইচবিসিসি) প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে ইউনিলিভার এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (অফসিডিও) কর্তৃক ’হাইজিন অ্যান্ড বিহেভিয়ার চেঞ্জ কোয়ালিশন” (এইচবিসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি তিনটি ধাপে – ইউনিলিভারের পরিক্ষিত এবং প্রমানিত হাইজিন ইন্টারভেন্সন, আচরণ পরিবর্তন প্রোগ্রাম এবং ডিজিটাল সমাধানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইনটারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) এবং বাংলাদেশের জাতিসংঘের হাই কমিশন শরণার্থী (ইউএনএইচসিআর) চারটি সংস্থা এই জোটের অধীনে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশে মোট এইচবিসিসির অধীনে মোট ৬২,০০,০০,০০০ টাকা এবং ইউনিলিভারের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা জোটের অংশ হিসাবে কোভিড সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি আচরণ পরিবর্তনের এজেন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে এর অংশ হিসাবে এবং বাংলাদেশের ১৩,৪৪৪,৫১২ জনকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে।
এইচবিসিসি প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ব্র্যাকের লক্ষ্য হলো- মহামারী চলাকালে এক কোটিরও বেশি মানুষকে মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত আচরণে অভ্যস্ত করে তোলা, হাত ধোয়ার পরিমাণ বাড়ানো এবং কমিউনিটির মধ্যে সুস্বাস্থ্যের জন্য দরকারী পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির হার বৃদ্ধি ঘটানো।
২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে দেশের অন্তত ২০টি থানায় ১০০০ হ্যান্ডওয়াশিং স্টেশন স্থাপন এবং এক লাখ ৫৮ হাজার মানুষের কাছে কমিউনিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েছে ব্র্যাক।
ইউনিলিভার এর এই ওয়াশ সেন্টার এবং ব্র্যাকের অন্যান্য উদ্যোগগুলোর লক্ষ্যই হলো বস্তির অধিবাসীদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানো। অধিকন্তু, ইউবিএল যেহেতু দায়িত্বশীল ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের সুস্থতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে ভূমিকা পালন করছে, সেহেতু এসব প্রকল্প এবং তাদের ব্যবসায়িক নীতি কিভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে, সেটা দেখাও গুরুত্বপূর্ণ।
এ লক্ষ্যেই-ব্রিটিশ হাইকমিশনার এবং পরিদর্শনকারী দলের অন্যান্য সদস্যরা বস্তির ঘরগুলো ঘুরে দেখেন এবং অধিবাসীদের সাথে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেন যে, ইউনিলিভার এর ওয়াশ সেন্টার এবং ব্র্যাক এর কোভিড-১৯ কার্যক্রম বস্তির অধিবাসীদের আসলে কতটা কাজে দিচ্ছে।
গত ৮ মাসে পণ্য অনুদান, সচেতনতা তৈরি এবং দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৩৫ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। করোনাকালে এভাবেই প্রতিষ্ঠানটি পৌঁছেছে ৬ কোটির বেশি মানুষের কাছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন