বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

থমকে গেছে সোনারগাঁয়ের পর্যটন শিল্প

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

থমকে গেছে সোনারগাঁয়ের পর্যটন শিল্প

প্রাণঘাতী মহামারী কভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে রাজধানীর উপকণ্ঠের সোনারগাঁয়ে পর্যটকদের কোলাহল  থেমে গেছে। নেই কোনো হৈ হুল্লা আর আনন্দ উল্লাস। প্রতি বছর ঈদ, সরকারি ছুটিতে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর ভিন্ন চিত্র। নেই কোনো পর্যটকের আনাগোনা। এতে করে  কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১ এপ্রিল  থেকে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে সব পর্যটন কেন্দ্র দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সব পর্যটন কেন্দ্র পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে  জেলা প্রশাসন, এর পর লকডাউনের কারণে এখনো বন্ধ  জেলার সব হোটেল-মোটেল এবং পর্যটনকেন্দ্র। এদিকে সাড়ে চার মাস যাবত হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা মনে করছে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হলেও আয়ের খাত শূন্য। পাশা-পাশি বেকার হয়েছে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে পর্যটকদের ঢল নামে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। সোনারগাঁয়ে ঐতিহাসিক পানাম নগরী, সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বিশ্বের দ্বিতীয় বাংলা তাজমহল, পাঁচবিবির মাজারসহ মেঘনা নদী আর পর্যটনকেন্দ্রেগুলো ঘুরে মনে আনন্দের পাশাপাশি প্রকৃতির অপরূপ রূপ অবলোকন করত পর্যটকেরা। কিন্তু এখন সবই ফাঁকা,  হোটেল-মোটেল রয়েল রিসোর্ট এর পাশাপাশি বেকার দিন গুনছে পর্যটন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মূল ফটকে লাগানো হয়েছে তালা, আর কর্মচারীরা পার করছেন অলস সময়। পর্যটক না থাকায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিরাজ করছে শূন্যতা, ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক তারেক মিয়া বলেন, সাড়ে তিন মাসের উপর হয়ে গেল শ্রমিকদের গাড়ির চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলোর মালিক ও শ্রমিকরা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আয় রোজগার। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে অনেককেই, ভবিষ্যতে শ্রমিকদের ভাগ্য কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেকেই। নারায়ণগঞ্জের আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক মো. হাসান জহির বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত হোটেল- মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারিরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা, এক কথায় কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে জীবন জীবিকা স্তব্ধ হয়ে গেছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা মুস্তায়িন বিল্লাহ বলেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে , তাই সাধারণ জনগণকে মহামারী থেকে রক্ষা করা, আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে সোনারগাঁয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, করোনা আর লকডাউনে নারায়ণগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাওয়া ত্রাণ সহায়তা আমরা বিভিন্ন সেক্টরে প্রদান করেছি এবং বিভিন্ন পর্যটন শ্রমিক, পর্যটকবাহী যান এর চালক- হেলপারসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট যারা অসহায় হয়ে দিনযাপন করছে তাদের আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়ে এসেছি, আর যদি কেউ না খেয়ে কষ্ট পায় তবে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, করোনার প্রকোপ কমে গেলে আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসন জেলার সনল পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে আর নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে জেলার পর্যটনশিল্প।

সর্বশেষ খবর