সুনামগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর রোগীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, ফোন দিলেই অক্সিজেন সেবা দিতে হাজির হচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় এমন উদ্যোগ দিয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, অন্যটি জেলা সদর থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা ‘সুনামকণ্ঠ’। বাড়িতে থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পেয়ে যারপরনাই খুশি আক্রান্ত ও স্বজনরা। প্রসঙ্গত, করোনা মহামারী শুরুর পর সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের পুরনো ভবনে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করেন কর্তৃপক্ষ। শুরুতে এ ইউনিটে রোগী কম থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় বেড়েছে রোগী। কিন্তু আক্রান্তের মধ্যে যাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় কিংবা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তাদের চিকিৎসার জন্য এ ইউনিটে নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ। হাসপাতালটিতে চালু হয়নি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেমও। জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসে জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ‘সুনামকণ্ঠ’। জুলাইয়ের শেষ দিকে জেলা শহরে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা শুরু করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। চিকিৎসকের পরামর্শপত্র দেখে সংগঠনের যুব ও তরুণ কর্মীরা রোগীর বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেন। জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকেই সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, বিত্তহীনদের সহায়তা প্রদান, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে রেড ক্রিসেন্ট। বর্তমানে রোগীর বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে।’ গত ৫ আগস্ট থেকে করোনা রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম চালু করে স্থানীয় দৈনিক ‘সুনামকণ্ঠ’। ২১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তারা। তাদের ৩০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দিনের ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে রোগীর বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেন।

ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সুবাদে আমি করোনা আক্রান্ত মানুষের কষ্ট দেখেছি। দেখেছি কীভাবে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, কেউ কেউ মরছে। এমন পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জে বিনামূল্যে করোনা আক্রান্তদের জন্য অক্সিজেন সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সুনামকণ্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘করোনা রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আমি ও আমার পত্রিকার রিপোর্টারদের অনেকে এ কার্যক্রমে সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছি। এ মহামারীকালে সমাজের প্রত্যেক বিত্তবান মানুষকে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা উ”িত।’