সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অবৈধভাবে বালু তোলায় ঝুঁকির মুখে খানজাহান আলী বিমানবন্দর

বাগেরহাট প্রতিনিধি

অবৈধভাবে বালু তোলায় ঝুঁকির মুখে খানজাহান আলী বিমানবন্দর

বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর এলাকায় মিনি ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাগেরহাটে এবার অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে ভূতলের বালু তোলায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দর। প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে, মামলা করেও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের লাগাম টানা যাচ্ছে না প্রশাসন। জেলার ৯টি উপজেলায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বালু তোলা  হচ্ছে। রামপাল উপজেলায় নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মিনি ড্রেজার বসিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে বালু তোলা। অবৈধ বালু তোলার ফলে নির্মাণাধীন খান জাহান আলী বিমানবন্দরসহ এই জনপদের অধিকাংশ এলাকাই এখন হুমকির মুখে। আর এই বালু তোলা বন্ধ করে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সরজমিনে জেলার সব উপজেলা ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন সড়কের পাশ দিয়ে বালু নেওয়ার অসংখ্য পাইপ। রামপাল উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের সোনাতুনিয়া চন্দ্র মহলের উত্তর পাশ গোলবুনিয়া খালে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে, মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে আশপাশের বিভিন্ন নিচু জমি, ডোবা, পুকুর, নালা, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘরের চারপাশ ভরাট করা হচ্ছে। এত করে হুমটির মুখে পড়েছে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দর দূরত্ব ভেদে প্রতি ঘনফুট বালু ৬ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু রামপাল এলাকা ৯ জেলার সব উপজেলায়ই চলছে অবৈধভাবে বালু তোলা। কেউ নিজের জায়গা থেকে তুলে ভরাট করছেন নিজের জায়গা। আবার কেউ সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সরকারি নদী খাল থেকে বিভিন্ন মহলের সুবিধা নিয়ে চালাচ্ছেন এ অবৈধ বালু তোলার কাজ। রামপাল এলাকার ইউপি সদস্য এনামুল হাসান জানান, বিমানবন্দরে মাটি ভরাটের জন্য ভোলা নদী ও তার আশপাশে ব্যক্তিগত জমিতে পাশাপাশি ছয়টির মতো ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। রামপাল সদরের সিকি এলাকার ঠিকাদার মো. ফরিদ শেখের তত্ত্বাবধায়নে ওই বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ৫টি গ্রামের মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্য রয়েছে। এসব এলাকায় ভূমিকম্প হলে বাড়িঘরের পাশাপাশি বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। উজড়কুড় ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি  বোরহান উদ্দিন জানান, আমার জানা মতে সরকারিভাবে প্রতি ঘনফুট মোটা দানার বালু ২৬ টাকায় কেনা তা দিয়ে ভরাট করার কথা রয়েছে। তা না করে দাবদিখালী নদী, ফয়লাসহ বিভিন্ন এলাকার সরকারি নদী-খাল ও ব্যক্তিগত জমি থেকে ঠিকাদার ফরিদ ৬ টাকায় প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। নদী  থেকে বালু তোলার বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানান হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত জানান, ভূতলের বালু-মাটি তোলায় পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠের ধস হতে পারে। পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ অবৈধ কর্মকা  জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধ করা দরকার। সহকারী কমিশনার ভূমি শেখ সালাহউদ্দিন জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে ভোলা নদী ও আশপাশ এলাকায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় পাঁচটি ড্রেজার ভেঙে ফেলা হয়েছে।

 আবারও অবৈধ বালু তোলার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রতিফুট বালু ৬ টাকায় তোলা হচ্ছে। বালু তোলার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জমির মালিকদের পক্ষ  থেকে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বালু তোলা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম জানান, একটি পক্ষ প্রশাসকের অনুমতি আছে এমন মিথ্যা কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছিল। খবর পেয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। এখন কোথাও তোলা হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর