যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মেঘনা নদী বেষ্টিত নরসিংদীর চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। একটি সেতুর অভাবে তাদের এ দুর্ভোগ। গুরুতর অসুস্থ অনেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায়। ওই চরাঞ্চলে উৎপাদিত সবজিসহ বিভিন্ন ফসল সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারেন না চাষিরা। কখনো কখনো বাজারে পৌঁছার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। সঙ্গে রয়েছে কচুরিপানার চরম দাপট। শহরে যাতায়াতে তাদের সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এতে জীবনের ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা; সঙ্গে যাতায়াতে অত্যধিক খরচ। শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারে না। ফলে, সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি ব্যাপক বেড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার এ ইউনিয়নে ৯টি গ্রামে প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষের বসবাস। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এলাকার কৃষক শ্রমিক জেলে তাঁতি শিক্ষার্থী ও রোগে আক্রান্তদের প্রতিদিন নদী পারাপারে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। মেঘনা নদীতে শুধু একটি মাত্র ব্রিজের অভাবে মানুষের এ দুর্দশা। সেখান থেকে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ। বর্ষা মৌসুমে পানিতে চারপাশ একাকার হয়ে যায়। রয়েছে কচুরিপানার চরম দাপট। সেতুর অভাবে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, প্রশাসনসহ মৌলিক অধিকারের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আলোকবালীর মানুষ। আলোকবালী গ্রামের রুবেল আহমেদ বলেন, নদীতে সেতু না থাকায় নৌকায় আসতে কচুরিপানার জন্য এক ঘণ্টার রাস্তা ৩-৪ ঘণ্টায় লাগে। রোগীদের যথাসময়ে চিকিৎসা দিতে পারি না। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা মাঝপথে সন্তান প্রসব করেন। কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারি না। শিক্ষার্থীরাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
বাখরনগর গ্রামের আহমদ মিয়া বলেন, রাতে আমার বাবা বুকে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নিতে চাইলে কচুরিপানা ও ঘন কুয়াশার কারণে কিছু দেখা যায়নি। এ কারণে কোনো নৌকা শহরে আসতে রাজি হয়নি। পরে ভোরে নৌকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। ততক্ষণে তার অবস্থা গুরুতর আকার ধারণ করে। হাসপাতালের চিকিৎসক জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রেফার করেন। সেখানে পৌঁছার আগেই বাবা মারা যান। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত। আলোকবালী গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলোকবালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডেও মেম্বর আমির সরকারকে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি রাস্তায় মারা যান। শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় পুলিশ প্রশাসন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে না। সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি ব্যাপক বেড়েছে। নরসিংদী এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ফুলকাম বাদশা বলেন, আমি পরিদর্শনে গিয়ে কচুরিপানায় তিন ঘণ্টা নৌকায় আটকে ছিলাম। সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। আলোকবালী থেকে করিমপুরের শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নরসিংদী সদর ইউএনও আসমা জাহান সরকার বলেন, ‘অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন। আমি পরিস্থিতি দেখেছি। তাদের সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’