প্রযুক্তির দুনিয়ায় আজ অ্যাপল শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সংস্কৃতির প্রতীক। নতুন আইফোন বা ম্যাকবুকের উন্মোচন এখন বিশ্বজুড়ে বড় উৎসবের মতো। এরই মধ্যে আলোচনায় থেকে যায় অ্যাপলের অনন্য লোগো—একটি কামড় দেওয়া আপেল।
এই লোগো নিয়ে নানা ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। কেউ বলেন, এটি আইজ্যাক নিউটন-এর আপেল তত্ত্ব থেকে অনুপ্রাণিত, কেউ বলেন এলান টিউরিং-এর স্মৃতিচিহ্ন, আবার কেউ মনে করেন এটি আদম-হাওয়ার নিষিদ্ধ ফলের প্রতীক। তবে আসল গল্পটি অনেকটাই সাধারণ—বলেছেন লোগোর ডিজাইনার রব জ্যানফ।
নিউটন আর প্রথম লোগো
১৯৭৬ সালে অ্যাপলের প্রথম লোগোতে দেখা যায় আইজ্যাক নিউটন গাছের নিচে বসে আছেন, মাথার ওপর ঝুলছে আপেল। নাম নিয়েও বিতর্ক ছিল। অনেকেই মনে করেন, নিউটনের সূত্রেই নামকরণ করা হয়। কিন্তু সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস জীবনীকার ওয়াল্টার আইজ্যাকসন-কে জানিয়েছিলেন, ফলভিত্তিক ডায়েটের সময় একটি বাগানে ঘুরতে গিয়ে তাঁর মাথায় ‘অ্যাপল’ নামটি আসে। স্টিভ ওজনিয়াক পরে নিউটনের গল্পের সঙ্গে নামটিকে যুক্ত করেন।
আদম-হাওয়ার নিষিদ্ধ ফল
বাইবেলের গল্প অনুযায়ী, জ্ঞান বৃক্ষের ফল খাওয়ার পর আদম-হাওয়া জ্ঞান ও সচেতনতা লাভ করেছিলেন। অনেকেই বলেন, অ্যাপলের লোগো সেই প্রতীক। তবে অ্যাপল এবং রব জ্যানফ দুজনেই এই ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করেছেন।
এলান টিউরিংকে স্মরণ?
আরেকটি তত্ত্ব হলো—এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক এলান টিউরিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কোড ভাঙেন তিনি। কিন্তু ১৯৫২ সালে সমকামিতার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে দণ্ডিত হন। হরমোন থেরাপি নিতে বাধ্য হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ১৯৫৪ সালে তিনি সায়ানাইড বিষক্রিয়ায় মারা যান, পাশে পাওয়া যায় অর্ধেক খাওয়া একটি আপেল। এখান থেকেই অনেকে ধারণা করেন, অ্যাপলের লোগো তাঁকে সম্মান জানাতে তৈরি।
অন্যদিকে, ১৯৭৭ সালে চালু হওয়া রংধনু রঙের লোগোও অনেকে সমকামী সম্প্রদায়ের প্রতীক ভেবেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এটি রঙিন ডিসপ্লের প্রতীক ছাড়া আর কিছু নয়।
আসল কারণ
২০০৯ সালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রব জ্যানফ জানান, কোনো প্রতীকী ব্যাখ্যা নয়, তিনি লোগো বানিয়েছিলেন সহজ ও পরিষ্কার আকারে। কামড়ের দাগ রাখা হয়েছিল যাতে স্পষ্ট বোঝা যায় এটি একটি আপেল—চেরি বা অন্য কোনো ফল নয়। আর ‘bite’ (কামড়) আর ‘byte’ (ডিজিটাল ইউনিট)-এর মিলটাও ছিল নিছক কাকতালীয়।
বিডি প্রতিদিন/আশিক