বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে ৩ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। বুধবার সকালে আলোরকোলে সমুদ্রের প্রথম জোয়ারের পানিতে হাজার-হাজার সনাতন হিন্দু নর-নারীরা তাদের পাপ মোচনের প্রত্যাশায় পূর্ণস্নানে আংশ নেবেন। ছয়শ’ বছরের অধিককাল ধরে দরবেশ গাজী-কালুর পূর্ণভূমি সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণে পূর্ণস্নান হয়ে আসলেও সুন্দরবন বিভাগের হিসাব মতে, এ বছর হবে ১৩২তম রাস উৎসব। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন ধর্মের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার ইকো ট্যুরিস্ট (প্রতিবেশ পর্যটক) ঐতিহ্যবাহী এই রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকে। হয় ৩ দিনব্যাপী মেলাও। এবারও রাস উৎসবে যেতে সুন্দরবন বিভাগের পক্ষ থেকে ৮টি নৌরুট নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। রাস উত্সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সুন্দরবন বিভাগ, দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ, রাস উৎসব উদযাপন কমিটি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই উৎসবকে সামনে রেখে দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে চোরা শিকারীর দল সুন্দরবনের হরিণ শিকারে মেতে ওঠে। এবার হরিণ শিকার রোধ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুন্দরবন বিভাগের ১২টি টিমসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এজন্য সুন্দরবনজুড়ে জারী করা হয়েছে রেড এলার্ট। বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবন কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ছুটি।
রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন জানান, বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সোমবার থেকে ১৩২তম রাস উৎসব শুরু হবে। সুন্দরবন বিভাগের হিসেবে এ তথ্যটি পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিকদের মতে, ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব থেকেই সুন্দরবনে রাস উৎসব হয়ে আসছে। প্রতি বছর বাংলা কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে রাস পূর্ণিমার তিথিতে এই রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, সোমবার প্রথম ভাটার সময়ে লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারে করে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থী আলোরকোলের উদ্দেশ্যে যাত্র করবে রাস উৎসবের পুণ্যার্থীরা। তাদের নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সুন্দরবন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। তাদের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি এবারও র্যাব, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের নিয়মিত টহল থাকবে। এছাড়া, দর্শনার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য সঙ্গে নেয়া, রান্নার কাঠ আহরণ ও হাঁস- মুরগীর মাংস ছাড়া সব ধরনের মাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাস মেলায় কোনোভাবেই যেন হরিণ শিকার ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/২০ নভেম্বর ২০১৫/শরীফ