পঞ্চগড়ের বোদায় চলছে বিলুপ্ত প্রায় ধামের গান উত্সব। উপজেলা মিলনায়তনে প্রতিদিন সন্ধায় স্থানীয় লোকনাট্য শিল্পীরা পরিবেশন করছে বিভিন্ন পালা। জেলার দূর-দূরান্ত থেকে দর্শকেরা এসে উপভোগ করছেন এই আয়োজন। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে ওঠা লোকনাট্যদলগুলো সমসাময়িক বিষয়ের উপর রচিত পালা পরিবেশন করছে। প্রতিদিন দুটি দল পালা গাইছে। উপজেলা প্রাঙ্গণের উম্মুক্ত মঞ্চের চার পাশে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধারাও খড়ের উপড় বসে উপভোগ করছেন ধামের গান।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকোনাট্য ধামের গান এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ একসময় এ অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল লোকনাট্যের এই ধারাটি। লোকজ্ঞান সমৃদ্ধ গ্রামীণ শিল্পীরা সমাজের নানা অসঙ্গতি এই গানের মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্নকভাবে তুলে ধরতেন। ধামের গানের শিল্পীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও বিনয় ও সহজ জীবন যাপনের কথা তুলে ধরতেন তাদের বিভিন্ন পালায়। একসময় বাড়ির আঙ্গিনায়, বটতলায়, হাটে, মাঠে সবখানেই অনুষ্ঠিত হলেও এখন আর তেমন হয় না।
বোদা উপজেলা প্রশাসন ও হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ড'র যেৌথ উদ্যোগে তিনদিনের এই আয়োজন শুর' হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। এ উপলক্ষ্যে উপজেলা মিলনায়তনে 'লোকনাট্য প্রসঙ্গ ও ধামের গান' বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে। প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রধান ড. ইশরাফিল শাহীন, লেখক প্রবির চন্দ, পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মণিসংকর দাশ গুপ্ত। পরে ধামের গান ও পিঠা উত্সবের উদ্বোধন করেন পঞ্চগড় ২ আসনের সাংসদ নুর'ল ইসলাম সুজন। সন্ধায় ঠাকুরগাঁওয়ের কচুবাড়ি পালাটিয়া দল পরিবেশন করে 'হাউসের বিহাই অঙ্গিলা বিহানী' এবং বালাভীর গোয়ালপাড়া পালাটিয়া দল পরিবেশন করে 'পাশ করা কামাইল'। আজ শুক্রবার সন্ধায় চুচুলী বটতলি পালাটিয়া দল পরিবেশন করে 'বউমার মিসকল' এবং লাঙ্গলগাঁও শাপলা পালাটিয়া দল পরিবেশন করবে 'দশ নাম্বার আঢি হাকু দাকু অধিকারী' নামের পালা।
শনিবার শেষ দিনে ঠাকুরগাঁওয়ের খলিশকুড়ি পালাটিয়া দল পরিবেশন করবে 'হরিবল সাধু মাইয়ার গুর'' পালা। আয়োজন প্রসঙ্গে বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আউয়াল বলেন, 'পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার ধামের গান মুলত এ অঞ্চলের মানুষের মৃত্তিকা সংগলগ্ন জীবনোপলব্ধি। লোকপ্রিয় এই ধামের গান আয়োজন করে পল্লীবাসী ব্রাত্যজনের মধ্যে জীবন স্পন্দন সৃষ্টির জন্যই এই আয়োজন করা হয়েছে।'
বিডি-প্রতিদিন/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শরীফ