এই তো কিছুদিন আগেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। তার আগে আরও ছয়জন গর্বিত বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেছেন। অর্থাৎ পাহাড়ের সঙ্গে বাংলাদেশিদের সখ্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাহাড়প্রেমীরা এখন আন্তর্জাতিক ট্রেকিংয়েও যাচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের বিখ্যাত হিমালয় অঞ্চলে এভারেস্ট বেসক্যাম্প, অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পের মতো ট্র্যাকিংয়ে তারা বেরিয়ে পড়ছেন। দিনকে দিন এ রুটে বাড়ছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের আনাগোনা। এতে বহির্বিশ্বে জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের পাহাড়প্রেমের বিষয়টিও সামনে উঠে আসছে। এবারের ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি কাজে লাগাতে নেপালের বিভিন্ন বিখ্যাত পাহাড় ও প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে বাংলাদেশ থেকে ছুটে যান বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী। এদের বেশির ভাগই পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী। ঈদের আগে ৪ জুন নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দেখা হয় এমন কিছু পাহাড়প্রেমী তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। দেশের পাহাড়প্রেমীদের কাছে পরিচিত ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ‘আলটিটিউড হান্টার’-এর সঙ্গে নেপালের এভারেস্ট ও অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেক করতে গিয়েছিল দুটি টিম। আলটিটিউড হান্টারের অ্যাডমিন ফজলুর রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যারা পাহাড়ে বাংলাদেশ থেকে টিম নিয়ে হিমালয়ে যাই তারা নিরাপদে ট্রেক শেষে দল নিয়ে দেশে ফিরে আসার ওপর গুরুত্ব দিই। এটা ইতিবাচক যে, দেশের গি পেরিয়ে মানুষ এখন ক্রমেই নেপালের মতো জনপ্রিয় রুটে ট্রেকিংয়ের জন্য উৎসাহিত হচ্ছেন। এতে দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্ব¡ল হচ্ছে।’ সরেজমিন অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প (এবিসি) ট্রেকিং করতে গিয়ে দেখা যায়, শুরুতেই এবিসিতে যেতে নেপালের পোখরা থেকে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমতি নিতে হয়। এরপর ঝিনু ডান্ডা নামক পয়েন্ট থেকে মূল ট্রেক শুরু হয়। একে একে চমোরং, ব্যাম্বো, মাছাপুছারে (এমবিসি) হয়ে এবিসিতে পৌঁছাতে হয়। পথে যেতে যেতে ঝরনা, পাহাড়, লেক, পাহাড়ি গ্রাম, সাসপেনশন ব্রিজ, ঝিরি, বরফে ঢাকা পথসহ আরও দৃষ্টিনন্দন সব দৃশ্য চোখে পড়বে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা ট্রেকিংয়ে শরীরের ওপর দিয়ে ধকল গেলেও অপার্থিব সব পাহাড়ি দৃশ্যে মাতোয়ারা থাকেন পাহাড়প্রেমীরা। এ ছাড়া পথে পাহাড়ি শিশুদের মায়াবি হাসি, পাহাড়ি ফুল, স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা, পাহাড়ি ঘোড়া ও মহিষের দলবেঁধে চলাচলের দৃশ্য দুর্গম পথের যাতায়াতকে সহজ করে তোলে। বিশেষ করে আকাশ পরিষ্কার থাকলে রাতে চাঁদের আলোয় অন্নপূর্ণা ও মাছাপুছারে পাহাড়ের স্বর্গীয় দৃশ্য মন থেকে কখনো মুছে যাবে না বলেই পাহাড়প্রেমীরা দাবি করেন। এবিসি রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা রেস্টুরেন্ট ও ট্রি হাউসগুলোতে আছে স্থানীয় ভেজ ও নন-ভেজ খাবারের ব্যবস্থা, গিজার ও ওয়াইফাই সুবিধা। খাবারে আরও আছে মোমো, পিজ্জা, নুডলস, বার্গার, চিকেন ফ্রাইয়ের মতো খাবার। কেউ চাইলে বেজক্যাম্পে যাওয়ার পথে ২ হাজার ৯০০ মিটার উঁচুতে বিখ্যাত হিমালয়ান অর্গানিক বিনস কফির স্বাদ নিতে পারেন। আবার অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পে গিয়ে ৪ হাজার ১৩০ মিটার উঁচুতে কারও উচ্চতাজনিত অসুস্থতা অনুভব হলে এবিসির বিখ্যাত গার্লিক স্যুপ খেয়ে শরীর চাঙা করে নিতে পারেন। পাহাড়প্রেমী পর্যটকরা অনেকেই সপ্তাহ খানেকের এ ভ্রমণে নিজেই নিজের ব্যাকপ্যাক বহন করেন। তবে কেউ চাইলে স্থানীয় পোর্টারের সঙ্গে ব্যাকপ্যাক বহনের জন্য চুক্তি করে নিতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ভ্রমণে আসা এক পাহাড়প্রেমী ও বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা এস এ তিথি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দ্বিতীয়বারের মতো এবিসি ট্রেকে এসেছি। এখানে বারবার আসতে আমার মন চায়। এখানকার প্রকৃতি যেমন আমাকে টানে একইভাবে সরল মানুষগুলোও আমাকে মুগ্ধ করে।’
এবিসি ট্রেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন বয়সি প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রতি বছর আসছেন। দেশ ও ভাষা ভিন্ন হলেও এই পথে সবাই সবার সঙ্গে দেখামাত্রই কুশল বিনিময় করেন। ভ্রমণ নিরাপদ হওয়ার শুভকামনা জানান। তবে এই ট্রেকে বয়স কোনো বিষয়ই না। ৭৪ বয়সি এক ইউরোপিয়ান নারী তা প্রমাণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ৫০তম বারের মতো নেপালে এসেছি। এই পাহাড় আমাকে অনেক টানে’।