পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আজিজনগর গ্রামের আফসার আলী (৬৫) দাবি করেছেন, স্যার আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ভুল, গতির প্রথম সূত্র সঠিক হলেও তা অসম্পূর্ণ, দ্বিতীয় সূত্র পুরোপুরি সঠিক এবং তৃতীয় সূত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক যুক্তি মাত্র। খরচবিহীন ইঞ্জিন উদ্ভাবনের গবেষণা করতে গিয়েই তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান বলে দাবি তাঁর।
আফসার আলী পেশায় একজন যন্ত্রবিদ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি দাবি করেন, ১৯৭৯ সালে চাকরিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম একটি ইঞ্জিন চলাচলের সূত্র আবিষ্কার করেন। তার সূত্র অনুযায়ী—“চক্রাকারে যান্ত্রিক কৌশলে জড়ের জড়তা ধর্ম, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ামুখী বলকে একই দিকে নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে গতি ও স্থিতি এই দুই ধর্মে রূপান্তর করলেই স্থায়ী গতি শক্তি বা স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন সম্ভব।”
তিনি জানান, নিউটনের গতির প্রথম সূত্র সঠিক হলেও এতে বাহ্যিক বলের উৎস ব্যাখ্যা নেই, তাই এটি অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় সূত্র—ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক—তার মতে সম্পূর্ণ সঠিক। কিন্তু তৃতীয় সূত্র—“প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”—তিনি এটিকে কাল্পনিক বলে দাবি করেন। তার মতে, আসল সূত্র হওয়া উচিত—“প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া আছে। ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থির থাকে, আর বাধাহীন পথে গতিশীল বস্তু নিজের জড়তার কারণে গতি বজায় রাখে।”
গবেষণার অংশ হিসেবে আফসার আলী একটি ইউ-আকৃতির সিলিন্ডার তৈরি করে পরীক্ষা চালান। পানি ঢালার পর বায়ু আটকে গিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়, যা মুক্ত হলে পানির পতনে শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি দিয়েই তিনি জ্বালানি বা বিদ্যুৎ ছাড়াই ইঞ্জিন চালানোর কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি নিজের টাকায় একাধিক ছোট ডিজেল ইঞ্জিন কিনে পরীক্ষা চালিয়েছেন, যা করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
আফসার আলী প্রায় তিরিশ বছর ধরে এই গবেষণার ফল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু কেউই তার সূত্র পরীক্ষা করে দেখেনি। তিনি বিশ্বাস করেন, তার গবেষণা যদি যাচাই-বাছাই করা হয় তবে বিশ্বে অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হবে।
১৯৭৫ সালে জগদল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৭৮ সালে ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দুই বছরের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন আফসার আলী। তিনি বহু প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন, তবে সুযোগের অভাবে প্রকাশ করতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি। এখন তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার সূত্র প্রমাণের সুযোগ চান।
আফসার আলীর ভাষায়, “রকেট চলে প্রতিক্রিয়ার বলে—এটা ভুল। আসলে রকেট চলে ভরবেগের কারণে, যা দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। আমার মতে তৃতীয় সূত্র শুধু যুক্তি মাত্র, বাস্তব নয়। আমি যা বলেছি, সেটাই সঠিক।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক