দেশজুড়ে গ্যাসের তীব্র সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ ছিল। বুধবার থেকে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে। গতকালও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলা চুলা জ্বালানো যায়নি। হঠাৎ এই গ্যাস বিপর্যয়ের কারণে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেনি সাধারণ মানুষ। গ্যাসসংকটের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের গৃহস্থালি, শিল্পকারখানা ও সিএনজি স্টেশনেও। এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) দুই দিন ধরে এলএনজি কার্গো জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে আরএলএনজি (রিগ্যাসিফাইড লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দুটো এফএসআরইউর মধ্যে একটি কার্গো ট্রান্সফার হচ্ছে। আরেকটি সন্ধ্যার আগে আগে নোঙর করার কথা। এটি হলে আমরা এলএনজি পুরো সরবরাহ দিতে পারব। এখন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ (গতকাল) মধ্যরাত থেকে পুরো সরবরাহে যেতে পারব বলে আশা করছি।’
গতকাল রাজধানীর পল্লবী আবাসিক এলাকা, রূপনগর, খিলগাঁও, বাড্ডা, মণিপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ একদমই ছিল না। গতকাল হঠাৎ করে এই গ্যাস বিপর্যয়ের কারণে কমবেশি ঢাকার প্রায় সব এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েন। পল্লবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার বলেন, এর আগে গ্যাসের চাপ কমে গেলেও এবার চুলাই জ্বলছে না। রান্নার কাজ একেবারেই বন্ধ। হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহব্যবস্থা পরোপুরি এলএনজির ওপর নির্ভরশীল। মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।
কেজিডিসিএল ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল আজম খান জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এলএনজিবাহী জাহাজ বার্থিং করা যাচ্ছে না। এ কারণে আগে যেখানে ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত, সেখানে তা ২৩০-এ নেমে এসেছে। এই সংকটের কারণে রেশনিং করতে হচ্ছে। তিনি জানান, সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। সহসাই গ্যাসসংকট কেটে যাবে। আরও ৫০-৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বৃহস্পতিবার (গতকাল) রাতের মধ্যেই পাইপলাইনে যোগ হওয়ার কথা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাসসংকটের কারণে বুধবার থেকে চট্টগ্রামে তৈরি পোশাকশিল্পের গ্যাসনির্ভর ইউনিটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের জন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। একাধিক গাড়িচালক জানান, গ্যাসের জন্য দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। কোনো কোনো স্টেশনে গ্যাস নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তারা ছুটে গেছেন অন্য স্টেশনে। একইভাবে চাঁদপুর জেলায় ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা।