কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের নাফনদী দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩৫৬ অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বিজিবি। তবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা হ্নীলা স্টেশনের উত্তর বিল ও লেদা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে।
রবিবার ভোর ও সকালে হ্নীলা স্টেশনের উত্তর বিল এলাকায় অধিকাংশ রোহিঙ্গারা নতুন ছোট ঘর তৈরি করে অবস্থান নেয়। হ্নীলা এলাকায় রোহিঙ্গার অবস্থান দেখে বিভিন্ন গ্রামে আগে থেকে অবস্থানরত অসংখ্য রোহিঙ্গা সেখানে ছুটে যায়।
অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার ছোট ঘর তৈরির খবরে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম, টেকনাফস্থ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাশেল সিদ্দিকী, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে প্রায় আড়াই শত রোহিঙ্গা পরিবারের তৈরিকৃত ঝুপড়ি ঘর গুলো উচ্ছেদ করে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একত্রিত করে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়। পরে বিজিবির মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব রোহিঙ্গাদের গণনা করে প্রায় নারী, শিশু ও পুরুষসহ ৩৫৬ জন রয়েছে বলে জানা গেছে। আটকের পর তাদের মাঝে শুকনা খাবার ও পানীয় জল দেওয়া হয়েছে। এ সময় প্রশাসনের অবস্থান দেখে অসংখ্য রোহিঙ্গা পুরুষ সেখান থেকে সটকে পড়তে দেখা যায়।
তবে স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, টেকনাফের হ্নীলা এলাকার কয়েজজন লোক রোহিঙ্গাদের অবস্থানের জন্য ব্যবস্থা করে দেয়। এরা রোহিঙ্গাদের মাঝে পলিথিন ও বাঁশ সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া হ্নীলায় রোহিঙ্গা অবস্থান নেওয়া জমিটি মাদ্রাসার জমি বলে জানায়। তবে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কয়েকটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের করছেন বলে জানা গেছে। এ সব স্বার্থনেষী মহলের কারণে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশে আরও উৎসাহিত হচ্ছে বলেও জানায় স্থানীয়রা।
হ্নীলা স্টেশনের উত্তর বিল এলাকায় ঝুপড়ি ঘর নিয়ে অবস্থান নেওয়া মিয়ানমার মংডু গওজ বিল এলাকার নূর মোহাম্মদ জানান, গত শনিবার রাতে আমারা ৬ পরিবারের ৩৬ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ নিয়ে হ্নীলা ফুলের ডেইল সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করি। পরে পাশের একটি এলাকায় কোন মতে অবস্থান নিলেও হ্নীলা খালী বিল এলাকায় রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে পলিথিনের বাড়ি করে পরিবার নিয়ে অবস্থান নিলে আমরাও এসে পলিথিন দিয়ে একটি বাসা করে ৬ পরিবার একত্রে অবস্থান নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা থাকার কোন পরিবেশ নেই। সেদেশের সেনা বাহিনীর বর্বরতা থেকে রক্ষা পেতে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। এখানেও অবস্থা খারাপ। এখন আমরা কোথায় যাব। একমাত্র আল্লাহই ভরসা আমাদের মত রোহিঙ্গাদের।
টেকনাফস্থ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দীকি জানান, হ্নীলায় রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর তৈরির খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায়। অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর উচেছদ করা হয় এবং ৩৫৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে একইদিন নাফনদীর শূন্য রেখা থেকে বিজিবির বাধার মুখে রোহিঙ্গা বোঝায় ৩৪টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানায় টেকনাফস্থ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দীকি।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬/মাহবুব