বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার জিয়ানগরে বখাটের উত্যক্ত করার কারণে অপমান-অভিমানে রোজিফা আকতার সাথী নামে নবম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রী আত্মহত্যা করছে। এঘটনার পর রবিবার রাতে পুলিশ হুজাইফা ইয়ামিন নামের ওই বখাটেকে আটক করতে গেলে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয় এবং পুলিশের একটি ওয়্যারলেস সেট খোয়া যায়। এসব ঘটনায় দুপচাঁচিয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার সকালে আত্মহননকারী স্কুলছাত্রীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর মন্ডল পাড়ার ক্ষুদে ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানীর মেয়ে সাথী জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। তাকে একই এলাকার আমিনুল মীরের ছেলে হুজাইফা ইয়ামিন দীর্ঘ দিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। বিষয়টি ছেলের বাবা ও পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালেও বখাটে ইয়ামিন উত্যক্ত করা থামেনি।
রবিবার সকালে সাথী দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটে ইয়ামিন আবার তার পিছু নেয় এবং উত্যক্ত করতে থাকে। এঘটনায় সাথী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং বাড়ি ফেরার পর বিকালে সে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সন্ধ্যার আগে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরে রবিবার রাত ৮ টার দিকে অভিযুক্ত বখাটেকে গ্রেফতার করতে জিয়ানগরের মন্ডল পাড়ার পার্শ্ববর্তী হেরুঞ্জা গ্রামে পুলিশ অভিযান চালাতে যায়। এসময় পুলিশ সদস্যরা বখাটের বাবা আমিনুল মীরকে পেয়ে আটকের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা পুলিশকে বাধা দেয় ও হামলা করে।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, যুবক ইয়ামিনকে আটক করতে গেলে আমিনুল মীরের লোকজনের হামলায় থানার এসআই আব্দুর রহিম, এসআই জাকির এবং এএসআই হাফিজ আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বখাটের আত্মীয়স্বজনসহ ২৬ জনকে আটক করে।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক আরো জানিয়েছেন, স্কুলছাত্রীকে উত্যক্ত ও আত্মহত্যা এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় থানার এসআই আব্দুর রহীম বাদী হয়ে একটি মামলা করে এবং স্কুলছাত্রীর বাবা অপর মামলাটি করেন। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছ।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল মন্ডল জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ সদস্যরা রাতেই স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশের উপর হামলার সময় একটি ওয়্যারলেস সেট খোয়া যায়। সেটি উদ্ধারে অভিযান চলছে।
আত্মহননকারী স্কুলছাত্রী রাফিজা আকতার সাথীর বাবা গোলাম রব্বানী জানান, বখাটে যুবক হুজাইফা ইয়ামিন তার মেয়েকে পথে-ঘাটে উত্যক্ত করতো। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় একাধিকবার সালিশী-বৈঠক করা হলেও ওই বখাটেকে নিবৃত্ত করা যায়নি।
জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব গণি জানান, সাথী তাদের স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষায় (জেএসসি) যথারীতি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পড়ালেখার প্রতি মেয়েটির খুব আগ্রহ ছিল। বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয়ে সে খুব ভাল নম্বর পেত এবং ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে। সাথীর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপনের জন্য আজ সোমবার স্কুলের ক্লাস সাসপেণ্ড করা হয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/৯ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল