এখনো আছে পাহাড় ধসের সেই চিহ্ন। কিছুই বদলায়নি। পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দুমড়ে-মুছড়ে থাকা বসতঘর গুলো। মাত্র ৬ মাস আগে যে পাহাড় মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছিল, সে বিধ্বস্ত পাহাড়ে স্বপ্ন পুরণের লড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো। তাই পাহাড়ে ভাঁজে ভাঁজে গড়ে উঠছে জনবসতি। কেউ ভাঙা ঘর মেরামত করছে। কেউ বা পাহাড় কেটে নতুন করে ঘর তৈরি করছে। আবার কেউ সব হারিয়ে নিজের ভিটার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
এমন স্বচিত্রে দেখা মিলছে রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী, রূপ নগর, মুসলিম পাড়া, রাঙাপানি, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও বেতার কেন্দ্র এলাকায়। শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় নয়, জেলা জুড়ে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বাস করছে কয়েক লাখো মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩জুন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রাঙামাটির সব পাহাড়। ধ্বংস হয়ে যায় পাহাড় ঘেষে বসবাসরত মানুষগুলোর বাড়ি-ঘর, হাঁস, মুরগী, গবাদি পশু ও ফসলি জমি। এ ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয় ১২০জনকে। এখনো সন্ধ্যান মিলেনি সে সময় পাহাড়ে মাটি চাপায় নিখোঁজ অনেক পরিবারের।
রাঙামাটির ১০টি উপজেলাসহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১৮হাজার ৫৫৮টি পরিবার। কিন্তু তারপরও মানুষ বসবাস করছে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও পাদদেশে। মনে মৃত্যুর ভয় থাকলেও কোন উপয় খুঁজে না পেয়ে আবারও বাধ্য হয়ে বিধ্বস্ত পাহাড়ে বসবাস করতে হচ্ছে বলে জানালেন ঝুঁকিতে বসবাসরত মানুষগুলো।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার কথা থাকলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু জেলা প্রশাসন বলছে ক্ষতিগ্রস্তদের যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে, সেটাই পূর্ণবাসন।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি শিমুল তলী এলাকারবাসীন্দা শারমিন আক্তার ও হাসিনা বেগম জানান, দীর্ঘ দিন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার পর আমরা আমাদের ভিটে মাটিতে ফিরে এসেছি। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে কিন্তু নিরাপদ কোন জায়গা দেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে পাহাড়ে ভাঙা ঘর মেরামত করে বসবাস শুরু করেছি।
অন্যদিকে সেদিন নিষ্টুর পাহাড়ের বরবরতা শুধু পরিবার পরিজন ও ভিটে মাটি কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে দীর্ঘ বছরেও শিক্ষার অর্জনও (সনদপত্র)। এমন অনেক শিক্ষার্থীর গল্প পুরো পাহাড় জুড়ে। অনেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিক থেকে ঝড়ে পড়েছে। অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে। আবার এসএসসি পাস করেছে, কিন্তু ভর্তি হতে পারছেনা কলেজে। কারণ পাহাড়ের মাটিতে বিলিন হয়ে গেছে শিক্ষা বর্ষের মূল সনদপত্র এমনটা জানালেন শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম।
সে জানায়, ২০১৭ সালে রাঙামাটি ভেদভেদী পৌর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। কিন্তু পাহাড় ধসের সময় তার পরীক্ষার মুল সনদপত্র নিজের ঘরে মাটি চাপা পরে বিলিন হয়ে গেছে। তাই সনদপত্র না থাকার কারণে ভর্তি হতে পারছে কলেজে। কিন্তু তারপরও জীবন যেন থেমে নেয়। ভাঙা পাহাড়ে স্বপ্ন পূরণে লড়ছে তারা।
এদিকে গত ১৩ জুন পাহাড়ধসের ঘটনায় ঝুঁকি বেড়েছে ভয়াবহ রুপে। এরপরও ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে অসংখ্য মানুষ। শুধু শহর এলাকায় ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে অন্তত ১০ হাজার পরিবার।
এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান জানান, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখনো এ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। যাদের যা প্রয়োজন চাহিদা অনুসারে তাই দেওয়া হচ্ছে। পাহড় ধসের কারণে যে সব শিক্ষার্থী পড়া-লেখা করতে পারেনি, তাদের নতুন করে পড়া-লিখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তাই আগামী বর্ষাতে পাহাড় ধসের ক্ষতি এড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যানমালে ঘটনা এড়ানো যায়। সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন