শুল্ক গোয়েন্দা আজ সকালে যশোরের বেনাপোলে এক স্বর্ণমানবকে আটক করেছে। অনেক নাটকীয়তার পর দুপুরে এই মানবের কাছ থেকে দুইটি স্বর্ণবার উদ্ধার করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দারা। স্বর্ণের বার দুটির মোট ওজন ২০০ গ্রাম। প্রতিটির ওজন ১০০ গ্রাম।
স্বর্ণমানব মোস্তাফিজুর রহমান (৪৩) মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী এলাকার তোতা মিয়া ঢালীর ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর-BA 0681534।
বৃহস্পতিবার সকালে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান।
শুল্ক গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোস্তাফিজুরকে যাত্রীকে নজরদারিতে রাখে। কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে চলে যাওয়ার সময় ট্রাভেল ট্যাক্স চেকিং পয়েন্টে তাকে চ্যালেঞ্জ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার হাঁটাচলায় অস্বাভাবিকতা থাকায় শুল্ক গোয়েন্দার সন্দেহ আরও ঘণীভূত হয়। প্রাথমিকভাবে, তিনি কোনোভাবেই স্বর্ণ রাখার কথা স্বীকার করছিলেন না।
চেকপোস্টে শুল্ক গোয়েন্দার অফিসে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও তার কাছে স্বর্ণেরবার থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকেন মোস্তাফিজুর। এরপর বরাবরের মতো তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বেনাপোলের রজনী ক্লিনিকে। সেখানে করানো হয় এক্সরে। এক্সরে রিপোর্টে স্বর্ণবারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। কিন্তু যাত্রী এই এক্সরে রিপোর্ট সঠিক নয় বলে চ্যালেঞ্জ করেন। পুনরায় এক্সরে করালেও একই রিপোর্ট পাওয়া যায়। কিন্তু মোস্তাফিজুর আবারও অস্বীকার করতে থাকেন।
এরপর শুল্ক গোয়েন্দাদের উদ্যোগে চিকিৎসক দিয়ে তলপেট কেটে স্বর্ণেরবার বের জন্য হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এরপর তিনি নমনীয় হন। অপারেশন ছাড়া স্বর্ণ বের করে দিবেন বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের জানান।
এরপর চলে স্বর্ণ বের করার পালা। যাত্রীকে শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে প্রাণের জুস খেতে দেয়া হয়। পরানো হয় লুঙ্গি। লুঙ্গি পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে দুটি সোনার বার বের করে আনেন ৪৩ বছরের যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, বেনাপোলে এসে বাস থামার পর বাথরুমে গিয়ে যাত্রী সোনার বার দুটি পায়ুপথে পুশ করেন। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে এক ভারতীয় নাগরিক তার কাছ থেকে এই বার দুটি বুঝে নিত। বিনিময়ে তিনি ১০ হাজার রূপি পেতেন।
শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেন তিনি। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও টাকার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করেন মোস্তাফিজুর।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, তিনি স্থানীয় বাজারের স্টেশনারি প্রোডাক্টসের একজন দোকানদার। এছাড়া ভারত থেকে শাড়ি, থ্রিপিস ও কসমেটিক্স এনে তিনি তার এলাকায় বিক্রয় করেন। ২০১৭ সালে তিনি ২২ বার ভারত ভ্রমণ করেন। আটক স্বর্ণের মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।
এই ব্যাপারে আটক স্বর্ণমানব মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আটককৃত স্বর্ণ বেনাপোল কাস্টমস গুদামে জমা করা হবে।
এর আগেও শুল্ক গোয়েন্দা বেনাপোলে বাংলাদেশি এবং বিদেশি বেশ কয়েকজন স্বর্ণমানবকে আটক করেছিল।
বিডি প্রতিদিন/১৪ ডিসেম্বর ২০১৭/আরাফাত