নারিকেল, সুপারি, পানে ভরপুর - আমাদের ভূমি প্রিয় রায়পুর’। নারিকেল, পান আর সুপারি সঙ্গে এখানে নতুন করে যোগ হয়েছে সয়াবিন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা উপকূলবর্তী অঞ্চলে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ ৫টি চর ও ৪টি ইউনিয়নে হাজার হাজার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়। দিন বদলের ফসল হিসেবে খ্যাত এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।
চর ইন্দুরিয়া, কানিবগা, জালিয়ারচর, চরঘাশিয়া, চর কাচিয়ার চরে এবং উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে এবার সয়াবিনের প্রচুর ফলন হওয়ায় এখানকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। হাজার হাজার একর জমিতে চাষ হওয়া সয়াবিনের সবুজ চারা যেন নতুন এক আবহের সৃষ্টি করেছে। প্রায় ১৫ বছর আগে সয়াবিনের চাষাবাদ শুরু হলেও বর্তমানে এটি রায়পুর উপজেলার প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে পরিচিত। ফলে এখানে সয়াবিনের চাষাবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসই হলো সয়াবিন আবাদের উপযুক্ত সময়। সার ও কীটনাশক তেমন দিতে না হওয়ায় এবং আগাছা কম থাকায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন এখানকার ব্যবসায়ী, মজুর ও কৃষকরা। উপজেলার কয়েকটি বাজারসহ হায়দরগঞ্জ বাজারে দেশের উৎপাদিত ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে কেনাবেচা হয়। সয়াবিনকে কেন্দ্র করে হায়দরগঞ্জ বাজারে পাঁচটি চাতাল ও ৬০-৭০টি পাইকারি দোকান গড়ে উঠেছে। এছাড়া হাজীমারা, আখনবাজার, মোল্লারহাট ও খাসেরহাটে ২৫-৩০টি পাইকারি দোকানে সয়াবিন কেনাবেচা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুরে মোট ৭ হাজার ৩৭৯ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও প্রায় ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে এবার সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর এ উপজেলায় সয়াবিন মৌসুমে ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন বেচাকেনা হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের কারনে এর মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও জানা গেছে।
উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মনির হোসেন স্বপন ও রাশেদুল হায়দার রকি জানান, দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোল্ট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী এ উপজেলা থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে থাকে। শতকরা ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদিত হলেও সয়াবিনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেনি কোন শিল্প-কলকারখানা। সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ ও সরকারী আনুকূল্য পেলে সয়াবিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে দিতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির আহম্মেদ বলেন, এ উপজেলায় ব্যাপকহারে সয়াবিন উৎপাদিত হয়। আমরা সয়াবিন চাষীদের দৌড়গোড়ায় গিয়ে বিভিন্নরকম পরামর্শ দিয়ে থাকি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের কাছে সয়াবিন দিন বদলের ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বিডি প্রতিদিন/১৭ জানুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা