একসময় যে প্রবীণদের জীবন কাটত বিরামহীন অবসরে, আজ তারা কর্মময় জীবনের চেয়েও কর্মব্যস্ত। ব্যবস্থা থাকলেও খেলাধুলা, আড্ডা বা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলানোসহ নিজেদের ব্যক্তিগত বিনোদনের জন্যই এখন যেন সময় খুজে বের করতে হয় পিরোজপুরের একটি এলাকার প্রবীণদের। অবহেলা আর নিঃসঙ্গতায় বেঁচে থাকাটা যাদের কাছে ছিল একপ্রকার দুঃর্বিসহ, আজ তাদের অন্য জীবন। সমাজে আবারও তার হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণদের এ পরিবর্তীত জীবনের পিছনে প্রধান সহায়ক হয়েছে প্রবীণ ক্লাব নামে প্রবীনদের একটি সামাজিক সংগঠন।
পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়ন। একটি ভবনের মধ্যে এতত্রিতভাবে অবস্থান করছে ৩০-৩৫ জন প্রবীণ। আছে নারী প্রবীণও। যাদের সবার বয়স ৬০ উর্দ্ধ। কেউ ক্যারাম খেলছে, কেউবা আছে দাবা নিয়ে। আবার কয়েকজন নিজের মধ্যে আলোচনায় ব্যস্থ। তাদের প্রত্যেকের চেহারা বা চোখে মুখে নেই কোন হতাশা বা বেদনা। খেলা শেষ হতেই শুরু গানের আসর। এটি কোন বৃদ্ধাশ্রমের চিত্র নয়। চিত্রটি কদমতলা ইউনিয়নে অবস্থিত প্রবীণ ক্লাব নামে একটি সামাজিক সংগঠনের। এ ইউনিয়নে রয়েছে এ রকম দুটি প্রবীণ ক্লাব।
পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সিকদার মল্লিকে আছে একটি। এসব ক্লাবে রয়েছে প্রবীণদের জন্য ক্যারাম, দাবা, তাস খেলার ব্যবস্থা। স্থানীয়ভাবে ক্লাবভিত্তিক প্রবীণদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল কমিটি। ধীরে ধীরে প্রবীণদের এ কমিটির একত্রিতা ও নিজেদের আগ্রহের ফলে তার এখন হয়ে উঠেছে স্থানীয় সমাজের গুরুত্ত্বপূর্ণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও গুরুত্ব দেয় এ সব প্রবীণদের। ফলে এলাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সাল এখন তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। পাশাপাশি আশ-পাশের প্রবীণদের মধ্যে কে অসুস্থ অথবা কেউ অন্য কোন সমস্যায় পরেছে কিনা তার খবর নিয়ে সমাধান করতে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। আর এসব কাজে আগ্রহ বা উৎসাহের কোন কমতি নেই প্রবীণদের।
কর্মজীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদা সম্পন্ন পেশায় থাকা প্রবীন ক্লাবের সদস্যদের সাথে কথা হলে তাদের মুখেই জানা যায় তাদের পাল্টে যাওয়া জীবনের কথা। জানা যায় কিভাবে এলাকায় বিনামূল্যে বা দান করা জমিতে তাদের এ ক্লাব গড়ে উঠেছে। এ ক্লাবের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সামগ্রী ও সহায়তা পেয়েছেন। এখানে তাদের একত্রিত হয়ে নানা ধরনের খেলাধুলার পাশাপাশি পেয়ে থাকেন স্বাস্থ্য সেবাও। প্রায়ই হয় গানের আসর। ক্লাবের সদস্য প্রবীণদের স্বরচিত গান নিজেদের কন্ঠে গাওয়া হয় আসরে।
এছাড়া এখন এলাকার অনেক বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিতে জনপ্রতিনিধিরা তাদের সহায়তা কামনা করেন। পাশাপাশি এলাকার কোন প্রবীণ অসুস্থ হলে বা অন্য কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে তারা ছুটে যান। তাকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করেন।
প্রবীণ ক্লাব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) এর জোনাল ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক আয়ের শতকরা ১০ ভাগ প্রবীণদের কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের। তারা এ প্রবীন ক্লাব ছাড়াও প্রবীনদের মাঝে হুইল চেয়ারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করে আসছে। সর্বপরি প্রবীণদের কল্যাণে সর্বদা তারা কাজ করে আসছে।
বিডি প্রতিদিন/৯ জুন ২০১৮/হিমেল