নাটোর সদর উপজলোর ছাতনী ইউনিয়নে এক ইউপি সদস্যের ইন্ধনে এক কৃষককে মাদক ব্যবসায়ী সাজাতে গিয়ে পুলিশের তিন সদস্য ও এক সোর্স গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় ইউনিয়নের ৫ নং ওর্য়াড শিবপুর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলীর বাড়িতে মাদক তল্লাশীর নামে তাণ্ডব চালায় সদর থানার এএসআই আবুল কালামসহ পুলিশের তিন সদস্য। ভুক্তভোগী আইয়ুবের চিৎকারে পুলিশের সাথে থাকা চার র্সোস পালাতে সক্ষম হলেও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ৩ পুলিশ সদস্যকে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে সদর থানার অফিসার ইনর্চাজ কাজী জালাল উদ্দীন আহমেদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী আইয়ুবের অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং যুবলীগের ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমরান আলীর ইন্ধনে পুলিশ তার বাড়িতে ঢুকে এ তাণ্ডব চালায়। ঘটনার সময় পুলিশের সাথে থাকা চার সোর্স গরু বিক্রির ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তবে ওই চার ব্যক্তিকে চেনে না পুলিশ।
ইউপি সদস্যের কথা শুনে কৃষককে নাজহোল করার ঘটনায় ইতোমধ্যে এএসআই কালামকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার।
এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য এমরান আলীকে থানায় নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃৃবৃন্দ ও ইউপি চেয়াররম্যান তোফাজ্জল হোসনে সরকারের চাপের মুখে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ভুক্তভোগী কৃষক আইয়ুব আলী জানান, তিনি ঢাকায় কোরবানীর হাটে তিনটি গরু বিক্রির ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এনে রেখেছিলেন বাড়িতে। শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় তার বাড়ির গেট ধাক্কাতে থাকে কয়েকজন ব্যক্তি। ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে জানায় তারা পুলিশ। এই কথোপকথনের মধ্যেই বাড়ির দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ে চারজন অজ্ঞাত ব্যক্তি। দরজা খুলতেই দেখা যায়, নাটোর সদর থানা পুলিশের এএসআই আবুল কালাম ও তার সঙ্গীয় র্ফোস। তারা দাবী করে, বাড়িতে ইয়াবা রাখা আছে। এ সময় কৃষক আইয়ুব, তার স্ত্রী, ছোট মেয়ে ও ছেলে ছিলেন বাড়িতে। স্ত্রী ও মেয়েসেহ আইয়ুবকে একটি ঘরে রেখে আইয়ুবের ছেলে মাসুদ রানাকে পেটাতে শুরু করে এএসআই কালাম। ‘বাবা (ইয়াবা) কই’ বলে মারতে মারতে মাসুদকে বাড়ির দরজার সামনে আনে কালাম। এরই ফাঁকে আইয়ুব আলীর ঘরে ঢুকে আলমারীর ভেতরে থাকা ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় পুলিশের তিন সোর্স। এদিকে, মাসুদ রানাকে মারতে মারতে বাড়ির বাইরে আনার সময় তার চিৎকারে জড়ো হয় এলাকাবাসী। তাদের প্রতিবাদের মুখে মাসুদকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এরই মধ্যে পুরো ঘটনা জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়ে পুলিশ ও অজ্ঞাত একজনকে ধরে পিটুনি দিয়ে আটকে রাখে।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দীন আহমদে বলেন, ‘এ ঘটনায় ব্রিবত পুলিশ। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী থানায় কোন অভিযোগ করেননি।’
ইউপি সদস্য এমরান আলীকে থানায় এনে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি বলনে, ‘বিষয়টি মিউচুয়াল হয়ে গেছে।’
ইউপি সদস্য এমরানকে থানা থেকে ছাড়াতে আসা ছাতনী ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসনে সরকার বলেন, ‘আমার পরিষদের সদস্য এমরানকে পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে জেনে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। বিষয়টি আগামীকাল সোমবার স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হবে।’
থানা থেকে বেরিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য এমরান আলী বলেন, ‘বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি। পুলিশ গত রাতে ওয়ারন্টেভুক্ত আসামী ধরতে ছাতনীতে গিয়েছিল। আইয়ুবের ছেলে মাসুদ একজন ই্ভটিজার। তাকে সর্তক করার জন্য পুলিশকে বলেছিলাম। তাই ওই রাতে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। পুলিশ তাদের মারপটি করছে কি না আমার জানা নেই।
তবে কেন তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়েছিল জানত চাইলে এমরান বলনে, ‘পুরো বিষয়টি আমার ওয়ার্ডে। তাই বিষয়টি অন্যভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। সোমবার শালিসে সব ঠিক করে দেয়া হবে।’
নাটোররে পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। ইতোমধ্যে এএসআই কালামকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। পুরো ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে। কার কতুটুকু অপরাধ, সে আনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/২৬ আগস্ট, ২০১৮/মাহবুব