বরিশালের গৌরনদীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শতবর্ষী বট গাছটি কেটে ফেলা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তিযুদ্ধের স্মতি বিজড়িত বট গাছ কাটা শুরু হলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা ইতিহাসের সাক্ষী ওই গাছটি না কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক-হানাদাররা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণের জনপদে প্রবেশের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের প্রবেশের খবর শুনে গৌরনদীর সাউদের খালপাড় এলাকায় বৃহৎ ওই বট গাছের নিচে এক পাশে (আড়ালে) পাক-হানাদারদের প্রতিহত করার জন্য অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। হানাদাররা সেখানে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ওইদিন হানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন নাঠৈর সৈয়দ হাসেম আলী, চাঁদশীর পরিমল মন্ডল, গৈলার আলাউদ্দিন ওরফে আলা বক্স ও বাটাজোরের মোক্তার হোসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ওইদিন আট পাক সেনা নিহত হয়। এটাই ছিল বরিশালে স্থলপথে প্রথম যুদ্ধ এবং এরাই বরিশাল জেলার প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।
সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ওই বটগাছের নিচে নানা অনুষ্ঠান করে আসছেন।
কিন্তু একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওই বটগাছটি কাটা শুরু করেন। ওইদিন সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ঐতিহাসিক গাছটি কাটতে বাধা দেন এবং প্রতিবাদ করেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান ওরফে ঈদুল মাঝি ও আ. হালিম বেপারী বলেন, ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী এই বট গাছটি মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক স্মৃতিবিজড়িত। বর্তমানে মহাসড়ক থেকে ওই বট গাছটি ১৮/২০ ফুট দূরত্বে রয়েছে। তাই এই বট গাছটি না কাটার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন তারা।
গাছটি কাটার ব্যাপারে কালিগঞ্জ সদরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আলী আশরাফ বলেন, তারা অন্যান্য গাছের সাথে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে এই বট গাছটি কেটে নেওয়ার কার্যাদেশ পেয়েছেন। সে অনুযায়ী গাছটি কেটে নিচ্ছেন তারা।
এদিকে সড়ক বিভাগের দাবি, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক প্রশস্ত করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়কের দুই পাশের গাছগুলো কেটে ফেলার প্রয়োজন। তাই তারা উন্নয়নের স্বার্থেই মহাসড়কের দুই পাশের গাছ কেটে ফেলছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা