পেশা কোন বিষয় নয়, ইচ্ছে থাকলে কর্ম দিয়ে রাষ্ট্র জয় করা যায়। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ গাড়ি চালক ফারুক হোসেন। তার উদ্দীপনা এবং অসাধারণ কর্মময় শিক্ষা অনুরাগ এ সমাজকে দিয়েছে নতুনত্ব। দিনাজপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে কিংবা কোন স্কুলে তিনি অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে আসছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ অবদান রাখার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক এর জন্য মনোনীত করা হয় দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর (মালিপুকুর) গ্রামের এই তরুণকে।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফারুক হোসেনকে শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী হিসেবে পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাকে এ পদক দেয়া হয়।
শিশু-বয়স্কদের হাতে বিনামূল্যে বই-খাতা-কলমসহ বিভিন্ন উপকরণ তুলে দিয়ে নীরবে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন এ ফারুক হোসেন। এক যুগেরও বেশি সময় থেকে পেশায় ড্রাইভার এই তরুণ নিজের উপার্জনের ২৫% টাকা অসহায় ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করে আসছেন।
অর্থাভাবে নিজের পড়ালেখার চাকা যেমন চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে এরকম আর কারো যেন না হয়- এই প্রত্যয় নিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে অন্ধকারের কালিমা দূর করে আলোকিত মানুষ গড়তে নীরব কারিগর হয়ে কাজ করেন গাড়িচালক ফারুক। আর তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন তারই সহধর্মিনী ছাবেরা আক্তার।
শুধু শিশু নয়, এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত বয়স্কদের হাতেও ফেরিওয়ালার মতো বিনামূল্যে তুলে দেন শিক্ষা উপকরণ। সাইকেল কিংবা ভ্যান নিয়েও শিক্ষার্থীদের বই-খাতা-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। নিজের যা আছে তাই নিয়ে নিরক্ষর মানুষের মাঝে আলো ছড়াতে দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করছেন ফারুক দম্পত্তি। এটাই তার আত্মতৃপ্তি।
ফারুকের এ কাজ দেখে প্রথম প্রথম গ্রামের অনেকে তাকে পাগল ভাবতেন। অনেকই বিদ্রূপ করে বিভিন্ন কথা বললেও এ নিয়ে তার কোন আক্ষেপ নেই। তিনি তার লক্ষে ছিলেন অটুট।
মো. ফারুক হোসেন জানান, বাড়ির আঙিনায় বসে বয়স্ক মহিলাদের শিক্ষা দেন। শিক্ষাদানের কাজটি করেন তার স্ত্রী ছাবেরা আক্তার। তিনি বলেন, বিএডিসি রংপুর দপ্তরের চাকরিতে থাকার কারণে আমার স্ত্রী এ কাজটি করেন। তবে আমি প্রতি মাসে এখানে আসি।
১৯৯৭ সালে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করা শুরু করলেও ২০০৫ সালে গ্রামের সর্বত্র এটা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, তার মতো দেশের যে যেখানে আছে এ ধরনের ঝরে পড়া শিশুসহ নিরক্ষরদের শিক্ষা কাজে এগিয়ে আসুক।
উল্লেখ্য, নিজ পরিবারের অভাবের তাড়নায় শিক্ষাবঞ্চিত এই যুবক অষ্টম শ্রেণি পাশের পর আর পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। সংসারে সহায়তার জন্য তাই গাড়ি ড্রাইভার বাবা মাহবুব হোসেন এর কর্মস্থল বিএডিসি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণে ফারুক বস্তা টানার কাজ নেন। পরে প্রশিক্ষণের পর তিনিও গাড়ি চালানোর কাজ নেন। ফারুক জানায়, তার ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে ৩ বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা মারা গেছে। এখন বোন, ভাই, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে শিক্ষার ফেরিওয়ালার সংসার।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা