চালুর পর থেকেই ট্রেনযাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটটি। বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পর্যটকদের কাছে এ রুটের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন অনেকটাই সোনার হরিণ পাওয়ার মতো ছিল। কিন্তু সেই সুখ যেন হঠাৎই হারিয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি ইঞ্জিন সমস্যা এবং যান্ত্রিক ত্রুটি যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না। কখনো যাত্রার শুরুতে, কখনো মাঝপথে বিকল হচ্ছে ট্রেন। বাধ্য হয়ে যাত্রা বাতিল করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। প্রায় সময় যাত্রাপথে এ ধরনের সমস্যা হওয়ায় বিকল্প পথে যাতায়াতের চিন্তা করছে যাত্রীরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন বলেন, আমাদের ট্রেনসেবা নির্বিঘ্নে করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু ইঞ্জিন সমস্যা আমাদের দীর্ঘদিনের। কক্সবাজার রুটে ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা চাই এ রুটে যাত্রীরাও স্বস্তির সঙ্গে যাত্রা করুক।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের জন্য দুই জোড়া নতুন ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ ও ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ নামে এ দুটি ট্রেন কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকার যাত্রী এবং পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ ভ্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে চালু করা হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর পর সমুদ্রপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের মাঝে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ ট্রেন দুটি কক্সবাজারের পর্যটন খাতের বিকাশকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। কিন্তু ইঞ্জিন সমস্যার কারণে এ রুটের ট্রেন থেকে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যাত্রীরা। সর্বশেষ রবিবার কক্সবাজারে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আটকে পড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’। ফলে চট্টগ্রাম আসতে না পারায় যাত্রা বাতিল হয়ে যায়। এদিন বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশনে গিয়ে যাত্রীরা জানতে পারে ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এরপর অনেকেই বিপাকে পড়েন।
গত ১৫ জুন কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ৮ শতাধিক যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার স্টেশন থেকে যাত্রা করে ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ স্টেশনে আসার পর ইঞ্জিনের মোটর পুড়ে বিকল হয়ে আটকা পড়ে। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে আরেকটি ইঞ্জিন গিয়ে ট্রেনটি পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এতে করে প্রায় ৫ ঘণ্টা ইসলামাবাদ স্টেশনে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করার জন্য পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে আসা প্রবাসী আবদুস সোবহান বলেন, ট্রেনে করে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য গত ১০ দিন আগে টিকিট নিয়েছিলাম। অনেক প্রস্তুতিও নিয়েছি। কিন্তু স্টেশনে এসে শুনি যাত্রা বাতিল। এ ধরনের ভোগান্তি হবে জানলে ট্রেনের টিকিটই কাটতাম না। রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে ১৪০টি ইঞ্জিন আছে। এর মধ্যে ২০ বছরের পুরোনো রয়েছে ৮২টি। রেলের ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। ২০ বছরের কম, এ রকম ইঞ্জিন আছে ৫৮টি। ২০২১ সালে ২৯টি ইঞ্জিন ক্রয় করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রেলওয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন ১১৩ থেকে ১১৬টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কাগজে-কলমে ১৪০টি ইঞ্জিন থাকলেও পাওয়া যায় ৮০ থেকে ৮২টি। একটি ইঞ্জিন গন্তব্যে পৌঁছার পর কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামে রাখতে হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয় না। ফলে মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।