হার্ট ব্লকের উপসর্গগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রায় একই ধরনের হয়ে যায়, এ পর্যায়কে হার্ট ফেইলুর বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাই প্রাথমিক উপসর্গগুলো জানতে পারলে অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা এড়ানো যায়। জেনে নেওয়া যাক র্হ্টাব্লকের কিছু উপসর্গ-
প্রাথমিক পর্যায় : প্রাথমিক অবস্থায় রোগী তার সব কর্মকাণ্ড ঠিক ঠিকভাবেই করতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তি যদি কোনো রূপ ভারী কাজ করতে যান অথবা তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করতে যান অথবা পেট ভরে খেয়ে কাজ করতে যান অথবা অত্যধিক টেনশন নিয়ে কোনো কাজ করতে যান বা কোনো কারণে ভীত হন বা ভয় পান, তবে তিনি শারীরিক কিছু উপসর্গ অনুভব করেন। এসব উপসর্গ হচ্ছে বুকে চাপ অনুভব করা, অনেককে বলতে শুনেছি তার বুকে-পিঠে একসঙ্গে চাপ অনুভূত হয়। কারও কারও বুক জ্বালাভাব অনুভূত হয়। কেউ কেউ এ ধরনের জ্বালাকে অ্যাসিড বা গ্যাসের কারণ বা রিচফুড খাওয়াকে অথবা ঝাল খাওয়াকে দায়ী করে থাকেন। কেউ কেউ এ ধরনের জ্বালাকে গ্যাসের সমস্যা মনে করে গ্যাসের মেডিসিন গ্রহণ করে থাকেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরনের ধারণার মূল কারণ হলো এ উপসর্গ ক্ষণিকের জন্য হয়ে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে পুরোপুরিভাবে নিবারণ হয়ে যায়। এ ছাড়া বলে রাখা ভালো যে, হার্ট ব্লকের প্রাথমিক পর্যায়ের উপসর্গগুলো বিভিন্ন কারণে ও বিভিন্ন সময়ে অনুভূত হয় এবং স্বল্প সময়েই নিবারণ হয়ে যায়।
কারণগুলো হলো : কায়িকশ্রম সম্পাদন করা, পাহাড় বা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা, তাড়াহুড়া করা, টেনশন করা, অত্যধিক রাগান্বিত হওয়া ইত্যাদি। আর সময় বলতে আবহাওয়া যেমন : অতিরিক্ত বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া, কনকনে ঠান্ডা বাতাস, ঝড়-বৃষ্টি, ভূমিকম্প, দুঃসংবাদ শোনার কালে ইত্যাদি সময়ে।
অনেকের মধ্যে বুকে চাপের সঙ্গে বুকব্যথা অনুভূত হয় অথবা চাপ ছাড়া শুধুই বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় বুকের ব্যথা, বাহু ও হাতে ছড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বাম হাতে বেশি পরিলক্ষিত হয়, কারও কারও বুক ব্যথার সঙ্গে চোয়াল, গলা অথবা পেটের উপরিভাগে ব্যথা অনুভূত হয়। তবে সব সময়ই বুকে ব্যথা নিবারণ হলে অন্য সব ব্যথাও নিবারিত হয়। কারও কারও এসবের সঙ্গে বা আলাদাভাবে কখনো কখনো বুক ধড়ফড় অনুভূত হয়।
মাধ্যমিক পর্যায় : উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলোর তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং উপসর্গগুলোতে ব্যক্তি ঘন ঘন বা প্রায় প্রায়ই আক্রান্ত হন এবং পূর্বের চেয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়ে থাকে। এসব উপসর্গের সঙ্গে খুব অল্প পরিশ্রমে ব্যক্তি হাঁপিয়ে ওঠেন, অলসতায় আক্রান্ত হন এবং কাজকর্মের উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন। অনেকের মনে ভীতির সঞ্চার হতে দেখা যায় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যান।
চূড়ান্ত পর্যায় : হার্ট ফেইলুর বলা হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে ব্যক্তিরা প্রায় এক ধরনের উপসর্গে আক্রান্ত হন। হার্ট ফেইলুর বলতে এমন এক অবস্থাকে বোঝানো হয়, যখন হার্ট শরীরের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে অপারগ হয়ে পড়ে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত সরবরাহ পায় না। যেহেতু রক্তের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন ও রসদ পৌঁছে, তাই অক্সিজেন ও খাদ্যাভাবে প্রতিটি অঙ্গই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব উপসর্গ বহাল থাকে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশ কিছু নতুন উপসর্গ যোগ হয়। যা একটা পর্যায়ে আরও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- বিছানায় ঘুমাতে গেলে শ্বাসকষ্ট ও শুকনা কাশির মতো হয়, মাঝরাতে শ্বাসকষ্ট ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে ব্যক্তির ঘুম ভেঙে যায়। তবে একটু উঠে বসলে বা পায়চারি করলে আবার তা নিবারিত হয়ে যায়, ব্যক্তি আবার ঘুমাতে পারেন। পেট ফেঁপে থাকা, পেটে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস সৃষ্টি হওয়া, হাত, পা ও মুখ পানিতে ফোলা ফোলা ভাব ধরা বা বেশি পরিমাণে পানি জমা হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, তীব্র ক্ষুধা মন্দায় আক্রান্ত হওয়া, অল্প খেলেই পেটে অত্যধিক ভরা ভরা ভাব সৃষ্টি হওয়া, অথবা খাওয়ায় অরুচি। এ ছাড়া অল্প পরিশ্রমে অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতে গেলে শ্বাসকষ্ট, বিশ্রামকালীনও শ্বাসকষ্ট অনুভব বা বুক ধরফড় করা। তাই এসব উপসর্গে যত্নবান হতে হবে।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালট্যান্ট শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।