অ্যাজমা বা হাঁপানি এমন একটি ব্যাধি যার সঙ্গে আমরা সবাই অল্প বিস্তর পরিচিত। এটি মানুষের দেহের অসহনীয় ও মারাত্মক রোগ। শ্বাসকষ্টজনিত কারণেই সাধারণত এই রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে সামান্য কোনো ব্যাপারেই যাদের শ্বাসনালিতে সংকোচের প্রবণতা রয়েছে এবং যাদের শ্বাসনালি অন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় স্পর্শকাতর তাদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শ্বাসনালি যখন সংকীর্ণ হয় তখন বুকের মধ্যে বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ হয়। শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুকের মধ্যে দম বন্ধভাব অনুভূত হয়। আর শ্বাসনালি তখনই সংকীর্ণ হয় যখন শ্বাসনালিতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগ হওয়ার সঠিক বা সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। যেসব কারণ আমাদের জানা সেগুলো শুধু হাঁপানি রোগের প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অ্যাজমা রোগটি সাধারণত বংশগত কারণে হয়ে থাকে। বেশির ভাগ হাঁপানি রোগীদের দেহে এ রোগ সৃষ্টি হয়েছে তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে। যদি কোনো পরিবারের বা বংশের পিতা, মাতা বা পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের এ রোগ থেকে থাকে তবে পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তবে বংশের সবাই যে আক্রান্ত হবে তা কিন্তু নয়। বিশেষ কোনো ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অনেকে ধারণা করে থাকেন, অ্যাজমা বা হাঁপানি একটি ছোঁয়াচে রোগ। এ ধারণার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রমাণ পাওয়া যেত যদি দেখা যেত যে হাঁপানি রোগীর আশপাশে যারা দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন তাদের মধ্যেও ব্যাধিটি সংক্রমিত হয়েছে। অ্যাজমা রোগ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকে। এর মধ্যে যে কারণগুলো রয়েছে সেগুলো হলো- ধুলোবালু, ধোঁয়া, হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন, সর্দিকাশি, মানসিক উত্তেজনা, অ্যালার্জি, ফুলের রেণু, রাতে বেশি খাওয়া, ধূমপান বেশি করা, ব্রঙ্কোলাইটিস ইত্যাদি।
অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা : অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী অ্যালার্জেনগুলো হচ্ছে- পুষ্প বা ঘাসের রেণু
নানা ধরনের ধুলা, ময়লা, ঘরের ধুলা, ময়লা, দূষিত বাতাস, কাঁচা রঙের গন্ধ, ঘরের চুনকাম, কোনো কোনো ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য
নানা ধরনের পালক, পোষা প্রাণীর লোম ইত্যাদি। এসব অ্যালার্জনগুলো বিক্রিয়া ঘটিয়ে অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে থাকে।
সব অ্যাজমা রোগীর অ্যাজমা সৃষ্টির কারণ এক রকম নয়। বিভিন্ন রোগীর দেহে বিভিন্ন কারণে এ রোগ বাসা বাঁধতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগটা নির্ভর করে প্রধানত উত্তেজকের ওপর। যেমন- অ্যালার্জি হচ্ছে হাঁপানির একটি প্রধান কারণ। অ্যাজমার আর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস।
নানানরকম মানসিক উত্তেজনার কারণেও হাঁপানি রোগ হতে পারে। কোনো কোনো ওষুধের কারণেও হাঁপানি হয়ে থাকে। পেশাগত বিভিন্ন কারণে অ্যাজমা হয়ে থাকে। ব্যায়ামের ফলেও হাঁপানির সৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে ভেজা, কুয়াশায় হাঁটা, ঠান্ডা লাগানো ও বিভিন্ন অ্যালার্জি জাতীয় খাবার। হাঁপানি একটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি। এ ব্যাধি হলে রোগী সব সময় প্রত্যাশা করে এটা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পেতে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় শীতকালে হাঁপানি রোগীদের যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। তবে নিয়মিত ওষুধ সেবনে ও নিয়মকানুন মেনে চললে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি অ্যাজমার উপসর্গ মাত্র। সব ধরনের শ্বাসকষ্ট হাঁপানি নয়।
-অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা