৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২১:০৫

উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির খবর নেই, জেলা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ততা!

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট:

উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির খবর নেই, জেলা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ততা!

জেলার ৫টি উপজেলা ও ৪৫টি ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পূর্ণ না করেই  দীর্ঘ ৭ বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তোড়জোর চলছে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এক সময়ের দাপুটে আওয়ামীলীগের নেতারা। 

আগামী ১১ ডিসেম্বর সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে তুমুল উত্তেজনা। এদিকে জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা টিকে রাখতে জেলা নেতারা তৈরি করেছেন বিশাল বাহিনী। ক্ষমতার হেরফের হলেই শুরু হয় সংঘর্ষ। জেলার অধিকাংশই কমিটিতেই শীর্ষ নেতাদের ভাই, ভাতিজা, জামাতা ও আত্বীয় স্বজন দায়িত্বশীল পদে থাকায় ইউনিটগুলোর কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছে জেলা ও উপজেলা নেতারা। এমনটাই দাবি জেলার সুশীল সমাজের লোকদের।

১১ ডিসেম্বর লালমনিরহাট জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে হয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটি, ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। এখানে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেনের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হাসান সোহাগ  ও অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক সারয়ার হায়াত খান। এই দুটি গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। 

উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে দুইটি করে কমিঠি গঠন করায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, বিরাজ করছে উত্তেজনা। হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পাটগ্রাম উপজেলায় ২৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শ্রীরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ও পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান আহমেদ। একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনিই নির্বাচিত হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিনের জাপার এ ঘাঁটি আওয়ামী লীগের দখলেও এলেও ধরে রাখার তৎপরতা নেই বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ আসনে পুরাতন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই একমাত্র ভরসা। নতুন করে কমিটি গঠন বা বর্ধিত সভার কোনো আয়োজন নেই সরকারি এ দলটির। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোপনে এ আসনের মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। ফলে হতাশ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। 

সম্মেলনের আমেজ নেই লালমনিরহাট-২ আসনের আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায়। লালমনিরহাট-২ আসনের আদিতমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ প্রকাশ্য দুই ভাগে বিভক্ত রয়েছে। উপজেলা সভাপতি শওকত আলী গ্রুপে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক ও অপরটি সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি। এ দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় সব কার্যক্রম পৃথক পৃথকভাবে পালন করা হয়। এ উপজেলার সব সহযোগী সংগঠন চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। 

২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা যুবলীগ। ২০১৪ সালের কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রলীগ। স্বেচ্ছাসেবকলীগ চলছে প্রায় ১০ বছরের অধিক পুরনো কমিটিতে। একই অবস্থা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, ওলামালীগসহ সব সহযোগী সংগঠন চলছে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিতে। ফলে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে এক সময়ের দাপুটে আওয়ামী লীগ। প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব না থাকলেও একইভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সব সহযোগী সংগঠন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় আহবায়ক কমিটি গঠন ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছেন দলটির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এ কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের ভাতিজাকে আহ্বায়ক করায় দলের একটি অংশ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। ঘটে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা। পরে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকায় কেন্দ্র থেকে এ কমিটি স্থগিত করা হয়। পৌর কমিটিতে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের জামাতা। পৌর সভার কয়েকটি ওয়ার্ড কমিটি হলেও সংঘর্ষেও আশংকায় বাকিগুলো স্থগিত করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কমিটি না হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর