মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল চা বাগানে প্রতিবেশীর দায়ের কোপে গুরুতর আহত হওয়া কানন বালাও (৩৪) অবশেষে মারা গেছেন। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
দুপুরে বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এবং পাল্লাথল চা-বাগানের হ্যাড ফ্যাক্টরি ক্লার্ক অঞ্জন দাস কানন বালার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোরে প্রতিবেশী নির্মল কর্মকারের দায়ের কোপে কানন বালা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। একই ঘটনায় নিহত হন কাননের স্বামী ও মেয়েসহ চারজন।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর রাতে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির পাল্লাথল চা বাগানে পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মল কর্মকার দা দিয়ে কুপিয়ে তার স্ত্রী জলি বুনার্জিকে হত্যা করে। এসময় জলিকে বাঁচাতে গিয়ে নির্মলের দায়ের কোপে নিহত হন জলির মা লক্ষ্মী বুনার্জি। স্ত্রী ও শ্বাশুড়িকে হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি নির্মল। তাদের বাঁচাতে এসে ঘাতকের দায়ের কোপে নিহত হন প্রতিবেশি বসন্ত বক্তা এবং বসন্তের মেয়ে শিউলী বক্তা। এসময় গুরুতর আহত হন বসন্তের স্ত্রী কানন বালা।
ঘটনার সময় পালিয়ে বেঁচে যায় জলির নয় বছরের শিশুকন্যা চন্দনা বুনার্জি। একে একে সবাইকে হত্যার পর নিজেকেও শেষ করে দেয় নির্মল। প্রথমে নিজেই নিজের মাথায় দা দিয়ে কোপ দেয়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতবস্থায় কানন বালাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং নিহতদের লাশ মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় রবিবার রাতেই পাল্লাথল বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বাদী হয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
পাল্লাথল চা-বাগানের হ্যাড ফ্যাক্টরি ক্লার্ক অঞ্জন দাস সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে বলেন, এই ঘটনায় পুরো বাগানবাসী স্তব্ধ। একসাথে এতজনের মৃত্যু, ভাবতেই কষ্ট লাগছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে, নির্মলের হাত থেকে তার স্ত্রী জলিকে বাঁচাতে গিয়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি।
বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন বলেন, কানন বালা চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আজ সকালে মারা গেছেন। সিলেট কতোয়ালী থানা পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করবে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি পাল্লাথল চা-বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে বলেন, পাঁচজনের মৃত্যুর পর আহত আরেক নারী আজ সকালে মারা গেছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল