স্বল্প পুঁজি এবং শ্রমে লাভবান হওয়া যায় বলে মটরশুঁটি চাষে ঝুঁকছেন নাটোরের কৃষকরা। এক দশক আগেও আমন ধান কাটার পরে শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে থাকত এই জেলায়। বোরো মৌসুম শুরু হলে কৃষকরা ফের ধান চাষ শুরু করতেন। এখন সেই জমিতেই হচ্ছে মটরশুঁটির চাষ। এতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সেই সঙ্গে বাড়ছে মাটির উর্বরতা।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সাহা জানান, অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মটরশুঁটির বীজ বুনলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে নাটোরে ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটির চাষ হচ্ছে। গত মৌসুমে ৯৬০ হেক্টর ও তার আগের বছর এই জেলায় ৭১৫ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় নাটোরের কৃষকরা এখন মটরশুঁটির চাষে ঝুঁকছেন।
সদর উপজেলার চন্দ্রকলা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, এক সময় রোপা আমন ঘরে তোলার পরে বোরো রোপণের আগ পর্যন্ত জমি পতিত রাখা হতো। মটরশুঁটি তিন মাসের ফসল। তিন মাসে বিঘা প্রতি ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি মটরশুঁটির গাছ গবাদিপশুর খাবার এবং জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এবার আট বিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষ করছেন উপজেলার চৌগাছি গ্রামের আলম হোসেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি দেড় লাখ টাকার মটরশুঁটি বিক্রি করেছেন। আলম বলেন, আট বছর আগে আমি মটরশুঁটি চাষ শুরু করি। বছরপাচেক আগেও সংসার চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হতো। মটরশুঁটি চাষ শুরুর পর থেকে আমার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের চাষি জামাল উদ্দিন জানান, আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় এ বছর ফলন ভালো হয়নি। তবে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক লাভবান হয়েছে। ৫০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দরে প্রতিকেজি মটরশুঁটি বিক্রি করেছেন তিনি।
ঘরের কাজের পাশাপাশি মটরশুঁটি তুলে প্রতিদিন ১০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের গৃহিণী জাহেদা বেগম। এই কাজের সুযোগ পেয়েছেন শতাধিক নারী।
একই গ্রামের আনোয়ারা বেগম জানান, এই সময় বাড়তি টাকা পাওয়ায় সংসারের ছোটখাটো চাহিদা মেটাতে পারছেন তিনি।
নাটোর থেকে মটরশুঁটি কিনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন আফাজ উদ্দিন। তিনি জানান, বাজারে মটরশুঁটির প্রচুর চাহিদা। তাই কৃষকও ভালো দাম পান।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন