কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি ফের বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো জলকপাট। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন রাত থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। পরে ২৬ জুন সকাল ৬টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে রেকোর্ড করা হয়। তবে শনিবার সকাল ৯টার দিকে পানি কমে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলার পানি লালমনিরহাটর কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জানায় পাউবো।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া শাখা। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তবে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের।
তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মাচা বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তি বাগদাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর একটু একটু করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু রাতে প্রচণ্ড গতিতে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তারা পনিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তি ছয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্দ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় রাতের মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা