৬টি চিনি কলে এবার আখ মাড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের খবরে ৬০ হাজার আখ চাষি, ৫ হাজার শ্রমিক ও ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চোখে-মুখে আঁধারের ছায়া নেমে এসেছে। চিনি কলগুলো যাতে বন্ধ না হয় এ জন্য মিল গেটে আন্দোলন করছেন চাষি ও শ্রমিকরা। তারা এখন চেয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তাদের আশা প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে এ বছর চিনি উৎপাদনের কাজ বন্ধ থাকবে। সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, যে ৬টি চিনি কল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলোতে গড়ে ৬’শ থেকে ৮’শ শ্রমিক কাজ করে। সেই হিসেবে ৬টি চিনি কল বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়া প্রতিটি মিল এলাকায় গড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার আখ চাষি রয়েছেন। ৬টি মিল এলাকায় ৬০ বেশি আখ চাষি এবার আখ আবাদ করেছেন। তাদের আখের কি হবে সে বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি। ফলে আখ চাষিরাও রয়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। এছাড়া ৬টি মিলে ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর আতঙ্ক রয়েছে। তাদের আশঙ্কা একবার মিল বন্ধ হয়ে গেলে সেটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত সাদা চিনি বাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও সরকারি চিনি কলগুলো উৎপাদিত চিনির দাম পড়ে যাচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। ঋণের কারণে কারখানাগুলো সময়মতো আখ চাষিদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না চিনি কলগুলো। বিগত কয়েক বছরে মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ভর্তুকির টাকা দিয়ে মাড়াই মৌসুমের শুরু হলেও গত অর্থবছরে ভর্তুকিও কমিয়ে দেয়ায় মিলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শ্যামপুর আখ চাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোর এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করা হবে বলে বলা হয়েছে। যা শুভঙ্করের ফাঁকি। ডিসেম্বরে আখ মাড়াই শুরু হলে বন্ধ মিল এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করতে গেলে ৭০ থেকে ৮০ দিন লেগে যাবে। ততদিন আখের আয়ুস্কাল শেষ হয়ে যাবে। চাষিরাও আখের দাম পাবে না। এছাড়া বকেয়া টাকা কিভাবে পরিশোধ হবে তার কোনো নির্দেশনাও আসেনি। এ অবস্থায় মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে দাবি করেন তিনি।
শ্যামপুর সুপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার বলেন, এই মৌসুমে মিল বন্ধ রাখার চিঠি পেয়েছি। দেনা পাওয়ানার হিসাব কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন