দফায় দফায় বন্যার পর বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বাঙালি নদীতে জেগে ওঠা চরের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পলি মাটিতে ফসল চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চাষিরা লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে ফসল ফলাতে শুরু করেছেন। নদীর তীরে বোরোর বীজ তলা তৈরী করে জমি চাষ করছে। খরস্রোতা বাঙালী নদীর বুক জুড়ে বোরো ধান চাষের প্রস্তুতির পাশাপাশি রবি শস্য, আলু, মরিচ, গম, ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, বাদাম, মাসকালাই বপন করে অভাবী সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ ফিরে আনতে স্বপ্ন বীজ রোপণ শুরু হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাতলা উপজেলার অবস্থান। পূর্বে সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় রাক্ষুসী যমুনা ও বাঙালী নদী প্রবাহিত হয়েছে। ওই উপজেলা গুলোর ৮৫ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। যাদের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। ভাগ্যের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকাটাই যেন তাদের স্বার্থকতা। দীর্ঘদিন ধরে রাক্ষুসী যমুনা ও খরস্রোতা বাঙালী নদী খনন না করায় ওই নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া মানুষগুলো এখন ফসল চাষের জন্য বেছে নিয়েছে নদীর বুক।
শীত মৌসুমে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে স্থানীয় চাষিরা বোরো ধান চাষের পাশাপাশি রবি শস্য, আলু, মরিচ, গম, ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, বাদাম, মাসকালাই বপন করতে শুরু করেছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে অভাবী চাষিরা চাষবাস শুরু করে সংসারের জন্য নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু এলাকায় আগামজাতের বোরো ধান লাগানো হয়েছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় রবি ফসল চাষের জন্য কৃষক গরু ও লাঙল দিয়ে নদীর বুক চিরে ফসলের বীজ বপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে আগাম বৃষ্টি পাত না হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চাষিরা নদীর বুকে ফসল ফলাতে পারবে। শীতকালিন বেশ কিছু সবজি রয়েছে মাত্র ৪০ দিনে ফলন পাওয়া যায়। পতিত জমি হিসেবে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর নভেম্বর মাস থেকে স্থানীয় চাষিরা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে লাভ হয়ে থাকে।
এদিকে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বাঙালি নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, উপজেলার আড়িয়ারঘাট, নামাজখালী, রংরারপাড়া, রানীরপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, হুয়াকুয়া, সোনাকানিয়া, সর্জনপাড়া, শ্যামপুর এলাকার চাষিরা বাঙালী নদীর বুক জুড়ে শতশত একর জমিতে ইতিমধ্যেই আগামজাতের বোরো ধান রোপন করেছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় কৃষক লাঙল দিয়ে জমি চাষ করে রবি ফসল বপনের প্রস্তুুতি নিচ্ছে।
সোনাতলা উপজেলার আড়িয়ারঘাট এলাকার সিরাজুল আলম, নামাজখালী এলাকার তুহিন মিয়া জানান, বাঙালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে ৩-৪ বার বাড়ির ভিটেমাটিসহ জায়গা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর ফসলী কোন জমি নেই। তাই নদীর বুক ফসলের চাষ করেন। পতিত জমিতে অল্প পরিশ্রমেই ভাল ফলন পাওয়া যায়। বন্যার পর নদীতে বেশ পলি পড়ে এজন্য গোবর সার দিয়েই চাষ করা যায়। নদীর বুকে চর জাগলে ফসল ফলিয়ে সে ফসল স্থানীয় হাটে বাজারে বিক্রি করে সংসার চলে। তারা জানান, পরিবার নিয়ে দু’বেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচা যায়। করোনায় এখন শ্রমিকের কাজও পাওয়া যায় না। এসময় তাদের কাছে নদীর চরই এখন বড় ভরসা।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ আহমেদ জানান, প্রতিবছর বন্যার পর নদীর বুকে পলি জমে। এতে করে নদীর বুক ফসলের জন্য উপযোগী হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সার ও পানি সেচ দিতে হয় না। নদীকুলীয় লোকজন যাদের ফসলী জমি নেই তারা প্রতিবছর বাঙালী নদীর বুকে আগাম বোরো ধান রোপন করে। এই ধান রোপনের ১০০-১০৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাবারের জন্য খড়ের সংকট কাটায়। প্রতি বিঘায় এ ধান ৮-১০ মন উৎপন্ন হয়। নভেম্বর মাসের শেষে রোপন করে আর ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি এ ধান কৃষক কাটতে সক্ষম হয়। এই ধানের ভাত খুব স্বাদ লাগে। এছাড়া শীতকালিন বিভিন্ন সবজিও তারা চাষ বাস করে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল