ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। বিস্তির্ণ সৈকতজুড়ে ইট-সুরকি ও পাকা ভবনের ভগ্নাংশ এখন মরণ ফাঁদ। পর্যটকরা সেকতে নেমে ইট-সুরকির কারণে অনেক সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। রক্তাত্ব আহত হয়। বিশেষ করে জোয়ারের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। এছাড়া সৈতকজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। এতে বিরক্ত দেশী-বিদেশি পর্যটকরা। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যাথা নেই কুয়াকাটা পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্থ উপভোগ করার বিরল সুযোগ রয়েছে সাগর কন্যা কুয়াকাটা সৈকতে। এ কারণে সারা বছরই দেশী-বিদেশি পর্যটকে মুখর থাকে দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা সৈকত। বিভিন্ন উৎসব পার্বনে প্রচুর দর্শানার্থী সমাগম হয় কুয়াকাটায়। শীত মৌসুমে আসে প্রচুর পিকনিক পার্টি। অথচ ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে কোনো সুনজর নেই কর্তৃপক্ষের।
পর্যটক নূর হোসেন বলেন, একটি সমুদ্র সৈতকে এভাবে ইট, সুরকি এবং পাকা ভবন ভেঙে ফেলার পর উচ্ছিটাংশ পড়ে থাকবে সেটা ভাবা যায় না। এটা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা।
আরেক পর্যটক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভাটার সময় পানির লেভেল অনেক নিচে নেমে যায়। তখন ঝূঁকি নিয়ে হলেও দেখেশুনে সৈকতে হাঁটা-চলা যায়। এতেও অনেকের পায়ে ইট-সুরকির খোঁচা লাগে। রক্তত্ব আহত হয়। কিন্ত জোয়ারের সময় ইট-সুরকি ও ভবনের ভগ্নাংশ পানিতে তলিয়ে থাকায় অজানা-অচেনা পর্যটকরা সৈকতে গোসলসহ হৈ-হুলোর উল্লাস করতে নেমে দুর্ঘটনার শিকার হন। কারো পায়ের গোড়ালি চ্যুত হয়। পড়ে গিয়ে আহত হয়। তখন আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়।
পর্যটক নুরুল আলম নুরু বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অব্যবস্থাপনা দেখে মনে হয় না এর কোন দেখভালকারী কর্তৃপক্ষ রয়েছে। অথচ সরকার একটু সু-দৃষ্টি দিলে কুয়াকাটা সৈকতে স্বাচ্ছন্দে বেড়াতে পারতেন পর্যটকরা।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, বাঁধের বাইরের অংশে সৈকতে এলজিইডি’র একটি রেস্ট হাউজ এবং বাউন্ডারি দেয়াল ছিল। গত কয়েক বছরে সমুদ্রের ভাঙনে এলজিইডির ওই রেস্ট হাউজ, পাবলিক টয়লেটসহ বেসরকারি অনেক পাকা স্থাপনা বিলীন হয়েছে। এসবের ধ্বংসাবশেষ বড় বড় পিলার-ভিমগুলো পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পক্ষে অপসারণ করা সম্ভব নয়। সৈকতে পড়ে থাকা ভাঙা ইটের আধলা, সুরকি, পাকা ভবনের ভগ্নাংশ ও ময়লা-আবর্জনা পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত পরিস্কার করে। কিন্তু ফের পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত ১০-১৫ দিন ধরে ওদিকে নজর দিতে পারেনি। পরিচ্ছন্ন কমীরাও ঠিকভাবে সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখে না। তবে শীঘ্রই সৈকত থেকে ইট-সুরকি বা ভবনের ভগ্নাংশ্ন অপসারণ করার কথা বলেন পৌর মেয়র বারেক মোল্লা।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার বলেন, একাধিক পাকা স্থাপনা সমুদ্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এসব অবকাঠামোর অবশিষ্টাংশ সৈকতে পড়ে থাকায় পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে। জোয়ারের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। তিনি নিজেও কুয়াকাটা সৈতক পরিদর্শনে গিয়ে এই দুরাবস্থা দেখেছেন। এগুলো দ্রুত অপসারণ করার ব্যবস্থা নিতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পর্যটকরা যাতে কোনো ভোগান্তি কিংবা দুর্ঘটনার শিকার না হন সেজন্য কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হবে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন