এক সময় তাঁত পল্লীর খট খট শব্দে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশুরবাড়ি এলাকা মুখরিত হলেও এখন পুঁজির অভাবে তা প্রায় বন্ধের পথে। পৈত্রিক পেশা ছাড়তে না পারায় ধার দেনা করে কোনো রকম টিকে রয়েছেন তাঁতিরা। অনেকে স্থানীয় মহাজনদের কাছে চড়া সুদের টাকা নিয়ে ব্যবসায় খাটিয়ে লোকসান হওয়ায় মহাজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জানা যায়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার ৫শ পরিবারের প্রায় ১২শ মানুষ বংশানুক্রমে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ২/৩ করে তাঁত রয়েছে। এর কোনটা চাকাওয়ালা, আবার কোনটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। কম্বল তৈরী করায় কারও তাঁত সচল আর করোটা অচল হয়ে পড়েছে ।
এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে এই পুরোনো দিনের শিল্পকে বাচানো যাবে বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন।
তাঁতিরা জানান, গত বছর ৪০ কেজি সুতার দাম ছিল ২২শ থেকে ৩২শ টাকা। এবার সেই সুতার দাম ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। ৪০ কেজি সুতায় দিয়ে ২০-২২ টি কম্বল তৈরী হয়। কম্বল বিক্রি করে কোনোভাবে আসল টাকা পাওয়া যায়। প্রতি বছর লোকসান হচ্ছে। গত বছর এ সময়ে কম্বল কিনতে পাইকাররা তাঁত পল্লীতে ভিড় করলেও এ বছর পাইকারদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। তার পরেও স্বল্প লাভে কিছু বিক্রি করলেও পুঁজির অভাবে কম্বল তৈরি করে মজুদ করতে পারছেন বলে জানান তারা।
তাঁত কারিগর ধনেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, শীত এলে আমরা এই কম্বল বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাই। কিন্তু গরমের সময় কম্বল তৈরির কাজ থাকে না। তখন শহরে গিয়ে রিকশা চালাতে বা ইটভাটায় কাজ করতে হয়। সরকার যদি কোনো সহযোগিতা করত তাহলে সারাবছর আমরা তাঁতের কাজ করতে পারতাম।
মালী রানী নামে এক নারী বলেন, অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সঠিক মজুরি পাচ্ছি না। অন্য কাজ করতে পারি না। সেজন্য এখন কম্বল তৈরি করি।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ও তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা দেয়াসহ তাদের কম্বল বাজারজাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা