দীর্ঘদিন গোপন রাখার পর প্রথমবারের মতো ব্যয়যোগ্য বা নিট রিজার্ভ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইসঙ্গে গ্রস রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালের জুনে এই রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রবর্তিত হিসাবপদ্ধতি ব্যালান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, ‘এই নিট রিজার্ভ দিয়ে মাসিক প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় নির্বাহ সম্ভব, যা সাড়ে তিন থেকে চার মাসের আমদানি ব্যয় কভার করতে যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম রিজার্ভ একটি দেশের জন্য স্থিতিশীল অর্থনীতির সংকেত।’
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আন্তর্জাতিক তিনটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ সহায়তা যুক্ত হয়। এই ঋণ সহায়তা যুক্ত হওয়ায় মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়ে যায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে ‘ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ গোপন রাখলেও এবার দ্বিতীয়বারের মতো এই তথ্য প্রকাশ করল।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তাদের মতে, বর্তমানে দেশের আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও টাকার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় রিজার্ভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দুই বছর পর বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের এই উচ্চমাত্রা দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে এই রিজার্ভ ধরে রাখতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং বৈদেশিক সাহায্যের সময়মতো ছাড় নিশ্চিতে সরকারের সুশাসন ও কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত/এমআই