গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ এলাকায় আজিজ কেমিক্যাল গ্রুপের এ এস এম ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একজন নিহত এবং কমপক্ষে ১৬ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টায় কারখানার ৭ তলা ভবনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আহতদের মধ্যে একজন দগ্ধ হয়েছেন। তিনি ওই ভবনে কর্মরত ইসাহাক আলী (৪৫)। তিনিসহ ৬ জনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও একজনকে পঙ্গু হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। অপর ৯ জনকে আল হেরা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। পারভেজ নামে এক শ্রমিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, ঘটনার সময় বিকট শব্দে কারখানার আশপাশের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বহুতল ভবনের জানালার গøাস ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন ভবনের লোকজন জানালার ভাঙ্গা কাচের আঘাতে আহত হয়েছেন। বিকট শব্দের সাথে সাথে কালো ধোঁয়া ও আগুন পুরো ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঝাঁঝালো গন্ধে আশপাশের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠে।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মিয়া রাজ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কারখানার সাত তলা ভবনের পুরোটাতেই ক্যামিক্যাল উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হতো। হাইড্রোজেন পারক্সাইডের সংরক্ষিত স্টোরেজ বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ওই ভবনের প্রত্যেক তলায় নানা ধরণের ক্যামিক্যাল সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে রয়েছে ক্লোরিন, বিøচিং পাউডার, কস্টিক সোডা, অ্যালুমিনিয়াম কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি। ওই ভবনে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। অগ্নিকান্ডের সময় কমপক্ষে ২২ জন শ্রমিক ওই ভবনে ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আগুন লাগার প্রকৃত কারণ নিরূপণ করা যায়নি।
মাওনা চৌরাস্তা আল হেরা হাসপাতালের চিকিৎসক রেজবাউল হাসান জানান, ওই কারখানা থেকে ১৬ জনকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ইসতিয়াক আলী (৫০), আশরাফুল ইসলাম (৩০), মনির হোসেন (৩৫), আমিনুর ইসলাম (৩৮), সুজাউল হক (৩৩) এবং সিলবেসতাকে (২৫) ময়মনসিংহ মেডকেল কলেজ হাসাপাতাল এবং জামিল ভূঁইয়া (৪১), আকতার উজ্জামান (২৫), শাওন (৩০), নাঈম ইসলাম (২০), রুকনুজ্জামান (২১), টুটন মিয়া (৪৮), আবির হোসেন (২১), ওয়াসিম (৪০) এবং স্বপন মিয়াকে (২৫) আল হেরা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। একজনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তার পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ওই কারখানার ক্যামিক্যাল উৎপাদন করায় এর আশপাশের বাসিন্দারা গভীর নলকূপের পানিতে দীর্ঘদিন যাবত বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি পেয়ে আসছেন। কারখানার ভেতরের লোকজন প্রক্রিয়া করে নিরাপদ পানি পান করেন। অথচ স্থানীয়দের ঝুঁকির মধ্যে রেখেছেন। একাধিকবার প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি মেনে কারখানার উৎপাদন চলে। কারখানায় কর্মরত লোকজনও গভীর নলকূপের পানি পান করেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, শুনেছি ৫ থেকে ৬জনের মতো আহত হয়েছেন। অগ্নিকান্ডের পর আহতদের কাউকে দেখা যায়নি। কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, রাত পৌনে ১১ টায় ভবনের নিচতলা থেকে আলমগীর হোসেন নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বাড়ি শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাব এলাকায়।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত জেলা আবুল কালামকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে পরবর্তী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন