চলতি বছর কুড়িগ্রামে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু এখন মাঠে মাঠে সবজি থাকলেও নেই কাঙ্খিত দাম। বিভিন্ন হাটে বাজারে কমে গেছে সবজির বাজার। কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে হতাশা বাড়ছে সবজি চাষীদের। এখন প্রতি কেজি বাঁধা কপি ৩ টাকা, ফুল কপি ৫ টাকা আর আলু প্রতি কেজি ৯ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও মিলছে না ক্রেতা।
পাশাপাশি বেগুন, শিমসহ কয়েকটি সবজির দাম অন্য সময়ের চেয়ে এখন বেশ কম। গড়ে কৃষকদের ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের উৎপাদিত এসব সবজি। এ কারনে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া তো দূরের কথা, নিজের আসল নিয়ে টানাটানিতে পড়েছেন কৃষকরা। এ মৌসুমে সবজি চাষ করে অনেক লোকসানে পড়েছেন তাদের অনেকেই।
সরেজমিনে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে ব্যাপক সবজি চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতা সংকটের কারণে বেশির ভাগ সবজির দাম কমে গেছে। ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। অনেকেই মারাত্বক লোকসান গুনছেন। মুলা, কপিসহ কোনো কোনো সবজি কৃষকদের খেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার শিবরাম ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক দেলওয়া হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৭০ শতক জমিতে বাঁধা কপি ও ফুলকপির চাষ করেছেন। খরচ পড়েছে ৪৫ হাজার টাকা। ভালো ফলন পেয়ে লাভের আশা করলেও এখন দাম না থাকায় তিনি বিপাকে রয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে তিনি জমিতেই এসব সবজি পাইকারদের নিকট বিক্রি করতেন বলে জানান। এবছর দাম কম হওয়ায় তারা আর আসছেন না। ফলে খেতেই এখন তা পচে যেতে পারে বলে আশংকা তার। এর বাইরে তিনি কুড়িগ্রামের সবজির পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কপি ৩ টাকা আর প্রতি পিচ ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকায় বিক্রি করতে নিয়ে আসছেন বলে জানান। খরচ হিসেবে তার মাত্র এখন পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে, হলোখানার মহাজালফাড়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, তিনি ৩০ শতক জমিতে ৬০হাজাার টাকা খরচ করে বেগুন ও শিমের চাষ করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ১৫ হাজার টাকার শিম ও বেগুন বিক্রি করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ও শিম মাত্র ১২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
কাঁঠালবাড়ি শিবরাম গ্রামের কৃষক আফসার আলী বলেন, আগাম জাতের আলু চাষ করে বাজারে কোন দাম পাচ্ছিনা। এখন বাজারে মাত্র ৮ থেকে ৯ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ দামে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচই তুলতে পারব কিনা জানিনা। এছাড়াও অনেক কৃষক তাদের খেতের সবজি তুলে আড়ত ও হাটে নিয়ে গেলেও বিক্রি করতে পারছেন না। এমনকি অনেকেই খেত থেকে সবজি তুলে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করছেন কিছুটা লাভের মুখ দেখতে।
কুড়িগ্রাম জিয়াবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী জানান, এবার ব্যাপক সবজি চাষ হওয়ায় এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় সবজির দাম কম। তাছাড়া এবছর অনেক ঢাকার পাইকার ট্রাক নিয়ে কুড়িগ্রামে সবজি কিনতে আসছেন না বলেও দাম কমে গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ