দলীয় মনোনয়নের জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার বিশেষ বর্ধিত সভায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় গ্রুপের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদসহ উভয় গ্রুপের ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আশংকাজনক অবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদ (৩৫), মো. জসিম (৩৪), মিজান মোল্লা (৪০), সুমন (৩০) মো. আশ্রাফকে (২৮) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার প্রশান্ত কুমার সাহা আহতদের কথা নিশ্চিত করে বলেন, আহত ১০ জনের মধ্যে ৬ জনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশাল পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হাসান মাহামুদ ও জসিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দলীয় এধাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাউফল পৌরসভা নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য হয়েছে। এ উপলক্ষে দলীয় মনোনয়নের জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিকেল সাড়ে তিনটায় স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে ওই সভা শুরু হয়। একপর্যায়ে আসম ফিরোজের ভাতিজা ও চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ওই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার তাঁকে (আলকাচ) উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বক্তব্য দেওয়ার কে? আপনাকে তো দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে। তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবকে গালাগাল শুরু করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়। একপর্যায়ে এমপি ফিরোজ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা আবদুল মোতালেবের ছেলে বগা ইউপির চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদকে টেনে হেচরে বাহিরে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। তাঁকে রক্ষা করতে তাঁর নেতা-কর্মীরা এগিয়ে আসলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে হাসান মাহামুদ (৩৫), মো. জসিম (৪০) মো. ইসমাইল হোসেন (৩৫), সুমন (৩০), মো. ইমরান (১৯), মিজান মোল্লা (৪২), জগদিসসহ (৩৮) দুই পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
সংঘর্ষের ওই দৃশ্য ধারণ করতে গেলে দুই সাংবাদিককেও লাঞ্চিত করা হয়েছে। পরে সভা শেষ না করেই আবদুল মোতালেব হাওলাদার সভাস্থল ত্যাগ করেন।
সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার জানান, ‘ঘটনার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর সাহেব আমার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে চান। তাই আমি আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা আলকাচ মোল্লাকে বলি, আপনি তো বহিষ্কৃত নেতা। আপনার বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আর এতেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা আরেক নেতা ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাকে গালাগাল করে। আমার ছেলেসহ আমার নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এর জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজ সাহেব দায়ী।’
এ বিষয়ে জানার জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি।
বাউফল থানার ওসি মো. আল মামুন সংঘর্ষে কয়েকজনের আহতের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন