৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৩

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সুবিধা পেতে শ্বশুরকে ‘পিতা’ বানিয়ে এনআইডি প্রস্তুত

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সুবিধা পেতে শ্বশুরকে ‘পিতা’ বানিয়ে এনআইডি প্রস্তুত

সোনালী খাতুন ২০১৩ সালে জিপিএ ২.৯৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইনসেটে তার এনআইডি কার্ড।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে অনৈতিকভাবে শ্বশুর ও শাশুড়িকে ‘পিতা-মাতা’ পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করেছেন এক নারী। শুধু তাই নয় একই পরিচয়ে দাখিলে মাদ্রাসায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন তিনি। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ওই নারীই নন, তার স্বামীও জাল পরিচয়পত্র তৈরী করে সরকারি চাকরি নিয়েছেন এমন অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মামলাও দেওয়া হয়েছে। 

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভাই-বোন পরিচয়ের এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আনিছুর রহমান ও সোনালী খাতুন। আনিছুরের পিতার নাম মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক। তার বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালেবেরহাট গ্রামে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আনিছুর রহমানের সাথে সোনালী খাতুনের বিয়ে হয় ২০০৭ সালে। সোনালী একই জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগরাকুড়া গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে। বিয়ের পর তাদের সংসারে ৩টি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এরপর সোনালী খাতুন তথ্য গোপন করে নিজের শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে ভোটার হন। এই পরিচয়ে সে উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন। এই মাদ্রাসা থেকে সোনালী খাতুন ২০১৩ সালে জিপিএ ২.৯৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

অপর দিকে তার স্বামী আনিছুর রহমান ও তার ছোটভাই আজিজুল হক আলাদা ব্যক্তি হলেও তারা দুজন ভোটার আইডি কার্ডে একই নাম ব্যবহার করেন। সেখান আনিছুর রহমান ও আজিজুল হক দুজনে আনিছুর রহমান নাম ব্যবহার করেন। এনআইডিতে দুভাই একই নাম ব্যবহার করলেও তাদের ছবি ছিল আলাদা। একই এনআইডি কার্ড ও শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে আনিছুর রহমান বাংলাদেশ রেলওয়েতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি নেন। তার অশিক্ষিত ছোট ভাই আজিজুল হক বড় ভাইয়ের ৮ম শ্রেণি পাশ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে চাকরি নেন। এ নিয়ে ২০১৪ সালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন কমিশন তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দু’ভাইয়ের নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে মামলা করেন। 

এ বিষয়ে প্রতিবেশী রাশেদ জানান, অসৎ উদ্দেশে নিজের স্ত্রীকে বোন বানিয়েছে আনিছুর রহমান। এটি অত্যন্ত অন্যায় করেছে সে। 

১নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। সে উলিপুর উপজেলায় বিয়ে করেছে। সোনালীর বাবার বাড়ি সেখানেই। ভোটার আইডিতে সোনালী খাতুনের পিতা-মাতার জায়গায় আনিছুরের পিতা-মাতার নাম ব্যবহার করেছে আমি জানি। 

আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক ভোটার আইডি দেখে নিশ্চিত করেন সোনালী খাতুন তার ভাবী। তিনি স্বীকার করেন, যখন ভোটার হয়েছিল তখন মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ সুবিধা পেতে তার ভাই এমনটি করেছেন।

আনিছুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ভুলবসত তার স্ত্রী এমনটি করেছেন। ভোটার আইডি ও শিক্ষা সনদ ঠিক করে নেওয়া হবে। 

সন্তোষপুর ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ জন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। তবে এ নামে তার একজন পুত্রবধূ রয়েছে। সে আনিছুর রহমানের স্ত্রী। 

এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, সোনালী খাতুন ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করণের সময় এসএসসি সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর