২৯ মার্চ, ২০২৩ ০৩:৪৫

ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ নিয়ে সংঘর্ষ

চাঁদপুর প্রতিনিধি:

ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ নিয়ে সংঘর্ষ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। বর্তমানে ইউনিয়নে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। 

জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীরা জানায়, ২৮ মার্চ ভিজিডি কার্ডধারী অসহায় নারী-পুরুষরা চাল নিতে ইউনিয়ন পরিষদে যায়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো: আমির হোসেন কার্ডধারীদের চাল দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিতে থাকে। ফোন পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন হেলাল উদ্দিন রাসেল। তিনিও কেন চাল দেওয়া হবে না, সচিবের কাছে জানতে চান। এসময় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত হন। তারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের রুমে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পরস্পরকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। মারামারির সময় হেলাল উদ্দিন রাসেল এবং সাইফুল ইসলাম হাতে আঘাত পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাইফুল মেম্বারকে থানায় নিয়ে আসে। হেলাল উদ্দিন রাসেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমেেপ্লক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

১৪ নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডি কার্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ ৯ জন ইউপি সদস্য। গত ২৭ মার্চ তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি দরখাস্ত করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। 

আহত হেলাল উদ্দিন রাসেল বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমার এক গরীব আত্মীয়কে একটা চালের কার্ড দিয়েছিল, কার্ডের চালের জন্যে তিনি পরিষদে গেলে তাকে চাল দিচ্ছে না দেখে আমাকে ফোন দেন। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই এবং সচিবের কাছে চালের কথা বললে তিনি বলেন, চাল দেওয়া যাবে না। উপজেলা থেকে চাল দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেন। ইউপি সচিবের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য সাইফুল আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তার হাতের ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।

ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ভিজিডি’র ১৩০টি কার্ড আমাদের পরিষদে এসেছে। আমরা (ইউপি সদস্য) চেয়ারম্যানের সাথে কথা বললে তিনি পুরুষ মেম্বারদের ৪টি এবং মহিলা মেম্বারদের ৩টি কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবার কাগজপত্র নেন। কিন্তু পরবতীর্তে তিনি পুরুষদের ২টি এবং মহিলাদের ১টি করে কার্ড দেন। এই অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ২৭ মার্চ আমরা ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউএনও চাল বিতরণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। আমি সকাল বেলা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে হেলাল উদ্দিন রাসেলসহ চেয়ারম্যানের একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি  আমাকে মারধর করে এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি। 

ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আমির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে বলেন, এবিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। কোন কিছু জানাতে চাইলে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন। এই কথা বলে তিনি পুলিশের সাথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সাংবাদিকরা চেয়ারম্যানকে না পেয়ে, মুঠোফোনে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি তাই উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

ফরিদগঞ্জ থানার এসআই শামছুজ্জামান জানান, ইউনিয়ন পরিষদে মারামারির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে ইউপি সচিব ও সাইফুল মেম্বারকে থানায় নিয়ে এসেছি।

এ বিষয় জানতে বিকেলে ইউএনও এর কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পেয়ে মুঠোফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে না পেয়ে উনার হোয়াটসআ্যাপে বার্তা পাঠালে তিনি হোয়ার্টসএপের মাধ্যমে বলেন, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি কামরুজ্জামানের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। 

ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, এবিষয়ে আমি ইউএনওকে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি আমাকে বলেন, ওই ইউনিয়ন সদস্যদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমি চেয়ারম্যানকে ডেকে এনেছি। তবে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় আজকে চাল বিতরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর