অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার চেষ্টার অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত দুই সহযোগীকে গ্রেফতা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে প্রতারক স্বামী পলাতক রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার ভাকুড়া গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ বিপ্লবের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন বর্তমানে বেসরকারি সংস্থায় ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ঠাকুরগাঁও সদরের মুন্সিরহাট শাখায় কর্মরত। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করেন তিনি। ১১ বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। দুই বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুর আদাবরে একটি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ কররেন বিপ্লব। গত মঙ্গলবার সকালে মিরপুরে এক লোককে টাকা দেয়ার করা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পরে বিপ্লব। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় না ফেরায় তাকে একাধিকবার ফোন করে তার বাবা। সেই রতেই ঢাকা আদাবর থানায় নিখোঁজ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানতে পারে সিরাজগঞ্জ এলাকায় আছেন বিপ্লব। পরদিন বুধবার বিপ্লবের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন স্বামীর খোঁজে সিরাজগঞ্জ থানায় যান। সেখানে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানতে পারেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে আছেন বিপ্লব। পরে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পীরগঞ্জ থানা পুলিশ বিপ্লবকে খোঁজা শুরু করেন।
এরই মধ্যে বিপ্লবের চোঁখ ও হাতা-পা বাধা ছবি ও একটি ভিডিও তার মোবাইলের ম্যাসেঞ্জার থেকে স্ত্রী ফারহানার মোবাইলের ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো হয়। এরপর একলাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বিপ্লবের মোবাইল নম্বর থেকে তার স্ত্রী ফাহানার মোবাইল নম্বরে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। যা ফারহানা থানা পুলিশকে সরবরাহ করেন। এ অবস্থায় থানা পুলিশ ও ফারহানার পরিবারের লোকজন বিপ্লবকে খোঁজ করতে থাকে। বুধবার সন্ধায় ফারহানা লোকমুখে খবর পায়, তার স্বামী বিপ্লবকে পীরগঞ্জ পৌর শহরের একটি সড়কে একটি পুরাতন মোটর সাইকেলের শোরুমে দেখা যায় তার স্বামীকে। পরে থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায় এবং মোটর সাইকেল সার্ভিসিং রুম তল্লাশি করে বিপ্লবকে বাধার রশি, কাপড়ের টুকরা ও একটি চেয়ার জব্দ করেন।এ সময় থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শো রুমের কর্মচারি মাসুম ও সুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলে শো রুমের মালিক পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজার ছেলে পুষ্প পুলিশকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ পুষ্প, মাসুম ও সুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশ জানতে পারে স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্যই শোরুমের সার্ভিসিং কক্ষে বিপ্লবের পরামর্শে অপহরণ নাটক সাজানো হয়।
পরে ঘটনায় ফারহানা ইয়াসমিন বাদী হয়ে স্বামী বিপ্লব, মোটরসাইকেল শো রুমের কর্মচারী মাসুম ও সুমন এবং ভাকুড়া গ্রামের আমিনুল ইসলামকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে মোটরসাইকেল শোরুমের মালিকের ছেলে পুষ্পকে রাতেই ছেড়ে দেয় পুলিশ।
পীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ জানান, স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে স্বামীসহ অন্যান্যরা অপহরণ নাটক সাজায়। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সাজানো সেই নাটকের রহস্য উদঘাটনপূর্বক অপহরণ নাটকের আলামত জব্দ করে এবং দুইজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। মূল পরিকল্পনাকারী বিপ্লবকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তবে বাদীর কোন অভিযোগ না থাকায় শোরুমের মালিকের ছেলে পুষ্পকে মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএ