এক সময় বিলাসবহুল জীবনযাপন করা যুবক সাগর হোসেন এখন নিঃস্ব। ২১ বছরের কঠোর পরিশ্রমে গড়া মোটরসাইকেলের শোরুম, টিনশেড আধাপাকা বাড়ি, দামি মোটরসাইকেল—সবই হারিয়েছেন মাত্র এক বছরের অনলাইন জুয়ায়।
সর্বস্ব হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত সাগর শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যায় জনসম্মুখে ১০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করে ঘোষণা দিয়েছেন, আর কখনো জুয়া খেলবেন না। গোসলের এক মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের গোলাবাড়ি বাজারে। সাগর হোসেন ওই এলাকার মো. চাঁদ আলীর ছেলে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন মগ ও বোতল দিয়ে সাগরের মাথায় দুধ ঢালছেন। উপস্থিত জনতা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন। ভিডিওতে সাগর বলতে থাকেন, “আমি এক সময় বিলাসী জীবন যাপন করতাম, আমার নিজস্ব শোরুম ছিল, বাড়ি ছিল। মোবাইলে অনলাইন জুয়া খেলে আমি সর্বস্ব হারিয়েছি। আপনারা শিক্ষা নিন, কেউ জুয়া খেলবেন না।”
সাগর আরও বলেন, “আমার তিনটা সন্তান আছে। আত্মহত্যার কথা ভাবছিলাম। তবে এখন আর জুয়া খেলব না। আমি তওবা করেছি। দয়া করে আপনারাও এই সর্বনাশা খেলায় না জড়ান।”
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা সাগর জানান, প্রথমে কাপড়চোপড়ের ব্যবসা এবং পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুম দেন। দীর্ঘ ২১ বছরে আয় করে ২১ লাখ টাকায় বাড়ি ও ১৫ লাখ টাকায় শোরুম তৈরি করেছিলেন। মাসে আয় হতো ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু মাত্র এক বছরে ‘ওয়ান এক্স বেট’ ও ‘গ্লোরি ক্যাসিনো’ নামের দুটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জুয়া খেলতে গিয়ে সব হারান।
জুয়া খেলতে গিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেনা করেন, সুদে টাকা নেন। শেষে সবকিছু বিক্রি করেও প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনায় পড়ে যান। হতাশায় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তা বুঝতে পেরে দুধ দিয়ে গোসল করান এবং তাকে তওবা পড়ান।
সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন বলেন, “জুয়ার কারণে আমাদের বাড়ি, গাড়ি, গহনা—সবকিছু চলে গেছে। এখন যে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন, সেখানেই মানবিক কারণে থাকতে দিচ্ছে নতুন মালিক।” তিনি এই অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
পান্টি বাজারের দোকানি রাসেল হোসেন বলেন, “সাগরের একসময় শোরুম ছিল, দামি গাড়ি ছিল। আজ সে নিঃস্ব। এটা আমাদের জন্য শিক্ষা।”
সাগরের প্রতিবেশি রাশিদুল ইসলাম বলেন, সবকিছু হারিয়ে সাগর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমরা ১০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে তওবা পড়িয়েছি। যেন আর জুয়া না খেলে। আর অন্যরাও যেন সতর্ক হন। সেজন্য জনসম্মুখে গোসল করানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, দুধ দিয়ে গোসলের ঘটনার কথা শুনেছেন। তবে এখনো কেউ অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম